মিথিলার ডেনিম নিয়ে উদ্যোগ

0
উদ্যোক্তা সোহেলী সাজিয়া মিথিলা

বাবার বড্ড আদরের মেয়ে মিথিলা। শৈশব-কৈশোর এবং শিক্ষাজীবন কেটেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদচারণা ছিল৷ নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল তার। বাবা এ.কে.এম আবদুল হাই ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। দেশকে ভালবেসে বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং মেয়ে সোহেলী সাজিয়া মিথিলা হয়েছেন একজন দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা৷

ডেনিম, খুব জনপ্রিয় একটি নাম৷ বিশ্ববাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। বাংলাদেশ থেকে ডেনিমের বিভিন্ন পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। কাজেই দেশীয় কাঁচামাল এবং শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশনেবল ডেনিম ব্যাগ প্রস্তুতকারক হিসেবে কাজ করছে মিথিলার ‘বিদোরা’।

২০১৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন মিথিলা। ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া মিথিলাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন স্বামী সাবির আহমেদ। তিনি একজন ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ার এবং ব্যবসায়ী। প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত থাকতে বলেন মিথিলাকে। স্বামীর অনুপ্রেরণায় মিথিলা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করেন।

প্রথমে ৫টা জামদানি শাড়িকে ফিউশন করে এবং হ্যান্ডপেইন্টের মাধ্যমে ভিন্নভাবে তুলে ধরেন। বন্ধুবান্ধব পরিবার পরিজন সবাই বেশ পছন্দ করলেন তার জামদানির শাড়িগুলো। ৫টা থেকে পরবর্তীতে ৭০টা জামদানি বিক্রি হয় তার। সেই থেকে শুরু মিথিলার উদ্যোক্তাজীবন।

শুরুটা জামদানি শাড়ি দিয়ে হলেও স্বামীর সাথে থাইল্যান্ডে ঘুরতে গিয়ে মিথিলার নজরে পড়ে এক ভিন্ন কিছু৷ সেখানকার মার্কেটগুলোতে ডেনিমের তৈরি প্রোডাক্টের চাহিদা অনেক লক্ষ্য করেন তিনি৷

তিনি ভাবলেন, “আমাদের দেশে গার্মেন্টস শিল্প বেশ এগিয়ে এবং চাইলেই শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডেনিম দিয়ে কিংবা গার্মেন্টস এক্সেসরিজ দিয়ে ভিন্নকিছু করা যেতেই পারে” – সেই ভাবনা থেকেই ২০১৯ এর মাঝামাঝি সময়ে গাজীপুরে দু হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্যাক্টরি নেন। বিশাল একটি ঝুঁকি নিয়ে করোনাকালীন সময়ে তিনি নতুন করে তার উদ্যোগ শুরু করলেন।

দেশ বিদেশে ভ্রমণ করে প্রোডাক্টের আইডিয়া থেকে কোন প্রকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই কর্মীদের সাথে নিয়ে নিজেদের ডিজাইনে ডেনিমের বিভিন্ন পার্স, হ্যান্ড ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, ট্রাভেল ব্যাগসহ নানা ধরনের ব্যাগের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার ফ্যাক্টরিতে ২৫ জন কর্মী রয়েছে। মাসে আনুমানিক ৩ হাজার ব্যাগ উৎপাদন হয় ‘বিদোরা’ থেকে। ফ্যাক্টরি গাজীপুরে হলেও ঢাকার উত্তরায় রয়েছে হেড অফিস। সেখান থেকেই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মূলত ‘বিদোরা’ একটি অনলাইন প্লাটফর্ম।

উদ্যোক্তা মিথিলা বলেন, “খুব ভয়ে ভয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু রাতারাতি এতো সাড়া পাবো বুঝতেই পারিনি৷ এখন আমরা হোলসেল দিয়ে থাকি। দেশের বাইরে ইউএসএ, কানাডা এবং সাউথ আফ্রিকাতে আমার ব্যাগ যাচ্ছে। আমরা মূলত ডেনিম, ফেব্রিক এবং লেদার এর কম্বিনেশনে ব্যাগ তৈরি করে থাকি।”

তিনি বলেন: আমার স্বপ্ন ‘বিদোরা’ একটি ব্র্যান্ড হবে৷ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’- এই ট্যাগ লাইনের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করবে ‘বিদোরা’।

ফ্যাশন সচেতন টিনএজ এবং ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েদের জন্য ফ্যাশন জগতে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে বিদোরা’র সব স্টাইলিশ ব্যাগ। তাই এই ব্যাগের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিনকে দিন। বিদেশেও জনপ্রিয়তা পাবে- এমনটাই আশা করেন উদ্যোক্তা সোহেলী সাজিয়া মিথিলা।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here