মুসাররাত নওশাবা পড়াশোনা করেছেন আর্কিটেকচারে। স্থপতি হিসেবে চাকরির অভিজ্ঞতাও আছে। তবে এখন তিনি পুরোপুরি উদ্যোক্তা। ছোটবেলার স্বপ্নের সাথে তার একাডেমিক বিষয় বা বর্তমান কাজ কোনটিরই মিল নেই। শৈশবে স্বপ্ন ছিলো পর্যটক হওয়ার। সেটা হননি, তবে ছোটবেলা থেকেই শাড়ির প্রতি যে ভালোবাসা আর কাপড়ে নানা রঙ ও নকশা নিয়ে খেলার যে ঝোঁক ছিল; সেই ঝোঁককেই জীবিকার উৎস বানিয়ে নিতে ভালো লাগছে তার। খুবই উপভোগ করছেন উদ্যোক্তাজীবন ও কাজটাকে।
উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম উদ্দেশ্য নিজের শখের কাজকে আয়ের উৎস বানানো ও নিজের পরিচয়কে চিহ্নিত করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটানো। বিদেশী পণ্যের আগ্রাসন ঠেকানোর আন্দোলনে সামিল হওয়া, বিশেষ করে পোশাক খাতে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘ঋতি’র অনলাইন যাত্রা শুরু করেন। ‘ঋতি’ নতুন উদ্যোগ হলেও উদ্যোক্তা হিসেবে তার পথচলা ২০১৭ এর শুরু থেকে। পার্টনারশিপে একটা উদ্যোগের সাথে জড়িত ছিলেন, যেটা পরে অনাকাঙ্খিত কারণে বন্ধ করে দিতে হয়।
উদ্যোক্তা নওশাবা মূলত দেশীয় তন্তু নিয়ে কাজ করছেন। ‘ঋতি’-তে সব ধরনের তন্তু সুতি বা সিল্ক আবার কখনো মিক্সড। চেষ্টা করছেন দেশীয় তন্তু দিয়ে ফিউশন কাজ করার। সেই উদ্দেশ্যেই হ্যান্ডলুম সুতিতে কাঠ ব্লকপ্রিন্টের সাথে কিছু হাতের কাজ আর বিডওয়ার্কের সমন্বয়ে কাজ করেছেন, সেই সাথে সিল্ক-মসলিনের ফিউশন টাইপের কাপড়ে চলছে কাঠ ব্লকপ্রিন্টের কাজ।
শুরুতে পরিবার ও আশে-পাশের মানুষ সবাই খুব বাধা দিয়েছিলেন। ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন সবাই এই ভেবে যে মেয়েটা অহেতুক সময় নষ্ট করছে। তবে উদ্যোক্তা জীবনের এ পর্যায়ে এসে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে যেকোন ভালো কাজে সাফল্য আসে।
উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ সম্পর্কে জানান: “সবার মনে এই উপলব্ধি আনার জন্য অনেক অনেক ধৈর্য রাখতে হয়েছিল, কানে লাগাতে হয়েছিল কটু কথা বিশুদ্ধিকরণের ফিল্টার। নিজের উদ্যোগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত সবার সবক’টা নেগেটিভ কথাকে পজিটিভলি নিতে হয়েছিল দাঁতে-দাঁত চেপে। নিজেকেই নিজে প্রেরণা জোগাতে হয়েছে। যুদ্ধটা এখনও চলছে, তবে এখন মিত্রবাহিনীর দল ভারি হয়েছে, এই আর কি।”
খুব বেশি মূলধন নিয়ে শুরু করেননি নওশাবা, মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়ে, চাকরি থেকে জমানো টাকায়। বর্তমান মূলধন পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে যেটার প্রায় পুরোটাই তার নিজের। ব্যবসা থেকে করা লাভের টাকা রি-রোলিং করে করে আজ এই অবস্থানে তিনি। যদিও অনেকের কাছে এটা কিছুই নয়, তবে তার জন্য এইটুকুও অনেক।
ব্লক, টেইলর, এম্ব্রয়ডারি আর হাতের কাজের কর্মী মিলিয়ে ১২-১৩ জন কর্মী তার উদ্যোগের সাথে জড়িত।
সারাদেশিই ‘ঋতি’র পণ্য যায়। আর সেই সাথে বিদেশে বসবাসরত অনেকেই নিয়মিত তার কাছ থেকে পণ্য কেনেন। তার মধ্যে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বেশী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেইতারা আত্মীয়দের মাধ্যমে পণ্য গ্রহণ করেন। দুয়েকজন ডিএইচএল-ফেডএক্সের মাধ্যমেও পার্সেল নেন।
উদ্যোক্তা নওশাবার উদ্যোগের পেছনে তার নিজের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। নিজেই প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রেরণা দেন। আর আছেন দুই-তিনজন সাহস দেওয়া এবং পাশে থাকা উদ্যোক্তা বন্ধু। তাদের আশার কথায় আর সাহসে ভর করে কখনো পথচলা থামাননি।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বিষয়ে তিনি জানান: ‘ঋতি’-কে এমন একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যার সাথে জড়িত থাকবে হাজারো সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষত নারী আর থার্ড জেন্ডার; যারা চায় স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করার।
তরুণদের জন্য তার পরামর্শ হলো, “আপনার সব স্বপ্ন পূরণ হবে এমন নয়। তাই বলে জীবন থেমে থাকবে না। যেটাই করবেন প্রাণশক্তি দিয়ে করবেন। তাহলে সফলতা আসবেই। শুধু সেই সময়টা দিতে হবে।”
মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা,