কবিতা বেচে শারমিনের মাসে আয় লাখ টাকা

0
উদ্যোক্তা শারমিন আলম

জীবনের প্রথম দিকে দু-এক লাইন কবিতা লেখেনি; এমন মানুষ পাওয়া ভার। কিন্তু কবিতা লিখে কী আর সংসার চলে? ছাত্র জীবনে কবিতা লিখতে ভালোবাসতেন শারমিন আলমও। কবিতা নিয়ে অনেক স্বপ্ন আঁকতেন মনে মনে। চাইতেন তার কবিতা ছাপা হবে বইয়ের পাতায়। পারিপার্শ্বিক কারণে সেসময় তার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু তিনি কখনো ভাবেননি এই কবিতাই তাকে একদিন উদ্যোক্তা করে তুলবে।

২০০৫ সালে শেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করতে না করতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছিলেন শারমিন। সংসার জীবনে প্রবেশের পর চাকরি করা হয়ে উঠেনি তার। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার সুপ্ত বাসনা মনের মধ্যে লালন করে চলছিলেন।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর দিকের কথা জানতে চাইলে শারমিন বলেন, “বিয়ের আগে কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও সেটা হয়ে উঠেনি। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই ভাবতাম যে আমাকে কিছু করতে হবে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন থেকে ভাবনাটা শুরু। যে নিজের পায়ে নিজেকে দাঁড়াতে হবে”।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বাবা ও গৃহিনী মায়ের সন্তান শারমিন। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখে আসছেন সেলাইয়ের কাজ করতে, প্যান্ট-শার্ট থেকে শুরু করে মেয়েদের সবকিছু বানাতে। মায়ের উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি অনেক কিছু করেছেন সংসার জীবনে। খুব পরিশ্রমী একজন মানুষ ছিলেন শারমিনের মা। মাকেই নিজের উদ্যোক্তা জীবনের অনুপ্রেরণা মনে করেন উদ্যোক্তা শারমিন আলম।

কেনো উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জানতে চাইলে শারমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “সংসার জীবন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। স্বামীর কাছ থেকেও অনেক সময় আপত্তিকর কথা শুনতে হয়েছে। সন্তান সংসার সামলে উঠতে যেন হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছিল সংসারে । মনে হতো আমি যেন কারো করুণায় বেচে আছি। নিজের অনেক ইচ্ছেগুলোকে মাটি দিয়ে রেখেছিলাম। হঠাৎ করে একদিন আমার ছেলে বেলার বান্ধবী আফরোজা আমাকে উই-এর গল্প বলে এবং সেখান থেকেই আমি উই-এর দেখা পাই এবং জয়েন হই। তারপর থেকেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি”।

উদ্যোগের শুরুটা হাতে কাজ করা থ্রি পিস ও বাটিকের বেডশিট দিয়ে শুরু হলেও তার ভালোবাসা ও ভালোলাগার কাজ ছিলো তার নিজের লেখা কবিতা। এই কাজটার জন্য বেশি মূলধনের দরকার ছিলো তাই এটা দিয়ে শুরু করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। যখন থ্রিপিচ ও বেডশিট নিয়ে কাজ করে অনেক সাড়া পেলেন তখন নিজের লেখা কবিতা দিয়ে শো-পিস, মগ প্রিন্ট, প্লেট প্রিন্ট, গিফট আইটেমসহ নানা ধরণের নান্দনিক পণ্য তৈরির কাজ শুরু করলেন। এবারও যথারীতি ব্যাপক সাড়া মিললো।

কতো টাকা মূলধন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তা বলেন, “টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল সংসারটা। উদ্যোগ শুরু করার মতো কোন পুঁজি আমার ছিলো না। কাউকে না জানিয়ে আমার উদ্যোগটা শুরু করি বিয়ের ১৩ বছর পর। কারণ আমি জানতাম আমি জানালে আমাকে কেউ সাপোর্ট করতো না। তখন আমার বাচ্চার ম্যাডামের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ করি চার মাসের জন্য । আর সেই পুঁজি দিয়ে শুরু করি আমার উদ্যোক্তা জীবন”।

বর্তমানে পণ্য আনা নেওয়া থেকে শুরু করে বিক্রি করা; এমনকী ঢাকার ভিতরে কিছু পণ্য নিজে ডেলিভারি দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্যোক্তা। আর ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় পণ্য পাঠাচ্ছেন কুরিয়ারের মাধ্যমে।

‘স্বপ্ন ছোঁয়া’ নামে ফেসবুকে উদ্যোক্তার একটি পেজ আছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান যেমন: জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি উপলক্ষ্যে ক্রেতাদের চাহিদা মাফিক কবিতা লিখে শো-পিস তৈরি করে দেন। এ কাজ করেই মাসে লাখ টাকা আয় করছেন উদ্যোক্তা শারমিন আলম।

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, “আমি চাই আমার উদ্যোগকে সততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। চাই নিজেকে একটি বড় অবস্থানে দেখতে।

নিজের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আরও হাজারো নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে। যাতে সমাজে কেউ অসহায় অবস্থায় না থাকে। একজন নারী বোঝে আর একজন নারীর চোখের ভাষা। আমি চাই আমার সন্তানরাও উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক”।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here