ফ্যাশন এবং স্টাইল সদাপরিবর্তনশীল। তারপরও কিছু তাঁতের ফ্যাশন শাশ্বত, চিরন্তন। ফলে এক অঞ্চলের ফ্যাশনে প্রবেশ করছে অন্য অঞ্চলের ধারা। সেই কোন আদিকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তাঁতের ফ্যাশন বয়ে গেছে নানা আঙ্গিকে। ফ্যাশনের কতশত ধারা, তবু বাঙালি নারী আজও তাঁতের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজে অনন্য। ফ্যাশনে বিবিধ পোশাকের আধিপত্যকে কেয়ার না করে অনন্য স্থানটি ধরে রেখেছে তাঁতের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও কুর্তি। এসব ভাবনা থেকে তাঁতপণ্য দিয়ে উদ্যোক্তা ইভানা নাসরীন নিজের প্রতিষ্ঠান ‘মোকাম’ এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর।
গ্রামের বাড়ি নওগাঁ, বেড়ে ওঠাও নওগাঁতেই। পড়াশোনা নওগাঁ সরকারি মহিলা কলেজে, বাংলায় স্নাতক। উদ্যোক্তা হওয়ার আগে একটি প্রাভেট কোম্পানিতে চাকরি করেছেন।
উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন: আমি সেই ছোটবেলা থেকেই হাতের কাজগুলো করছি। উদ্যোক্তা হবার জন্য নয়, ভালো লাগা থেকে সব কাজ করা। ছোট থেকেই আঁকতে পছন্দ করতাম। মা, খালা, মামীরা কিছু সেলাই করলে আমি সেটা দেখে শিখে নিতাম। নিজের অনেক জামা নিজেই করেছি। চাকরি করতে গিয়ে যখন দেখলাম আমি আমার বাচ্চার সাথে থাকতে পারছি না, তখন খুব কষ্ট হতো। তখন আমি ঠিক করি, চাকরি করবো না, ব্যবসা করবো। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে অনেকেই পাগল বলেছেন, অনেকে আবার হেসেছেন, ঠাট্টা করেছেন। এতো ভালো চাকরি ছেড়ে কী এমন ব্যবসা করবো! মূলত এখানে থেকে ভাবনাটা আসে।’
তিনি বলেন, ‘কারও কথা গায়ে না লাগিয়ে, আমি নিজে যেহেতু ড্রেস বানাতে পারি, তাই শুরুতে খুব কষ্ট করতে হয়নি। নিজেই বানিয়েছি মেয়েদের ফতুয়া, কুর্তি, বিভিন্ন রকম ফ্যাশানেবল পাজামা। পরিচিতর মধ্যে সবাই খুব পছন্দ করছিলেন। বিক্রিও ভালোই। হঠাৎ একদিন আমার এক বন্ধু মেলায় অংশ গ্রহণ করতে বলেন। আমিও মেলায় অংশ নেয়ার জন্য নতুনভাবে অন্য রকম যা বাজারে অথবা অনলাইন ডিজাইনে কখনও দেখিনি; নিজের মেধা খাটিয়ে কিছু কুর্তি, আর কিছু কাপড়ের গহনা তৈরি করলাম। তারপর ২০১৮ সালের বৈশাখি মেলায় অংশগ্রহণ করি। আমার গহনা আর ড্রেসগুলো দেখে ক্রেতারা খুব প্রশংসা করেন এবং সব বিক্রিও হয়ে যায়। এই মেলা মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেক গুণ। এভাবে শুরু হয়েছিল আমার ব্যবসা জীবনের যাত্রা।’
ইভানা নাসরিন মাত্র দশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন। তিনি সম্পূর্ণ দেশি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন। দেশি তাঁতের কাপড় ও শাড়ি নিজের ডিজাইন এবং নিজ কারখানায় তৈরি করেন। এর মধ্যে আছে তাঁতের ফতুয়া, কুর্তি, থ্রি-পিস, শাড়ি এবং তাঁতের কাপড়ের গহনা। তার সাতজন কর্মী আছেন। এছাড়াও তিনি “মোকাম” নামের অনলাইনে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। দেশের বাইরে এখন পর্যন্ত আমেরিকাতে তার পণ্য গেছে। দেশের ভেতরে প্রায় সব বিভাগে পণ্য সরবরাহ করছেন। ‘করোনার কারণে ব্যবসার অনেক খারাপ অবস্থা চলেছে। আগে একটা সময় মাসে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। ‘
ইভানা আশাবাদী যে ‘মোকাম’ একটা ব্র্যান্ড হবে। যেখানে ব্র্যন্ডের পরিচিতিতে তিনি নিজের পরিচয় খুঁজে পাবেন।
“সবাই শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু আমি তাঁতের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এমন পণ্য বানাই যা অন্য কোথাও যেন না পাওয়া যায়। আমার আর একটি লক্ষ্য অসহায় ও গরীব মানূষদের জন্য বড় কর্মসংস্থান তৈরি করা, যেখানে আমার কর্মীরা কাজ করে আমার সাথে সাথে নিজেরাও এগিয়ে যাবেন,” ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান।
তরুণদের উদ্দেশে ইভানার পরামর্শ: প্রতিটি মানুষের একটা পরিচয় থাকা অত্যন্ত জরুরি। তাই নিজের পরিচয় তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে হবে। সততার সাথে এগোতে হবে। সাহস করে কোন কিছু শুরু করাটাই বেশি জরুরি। যা আছে তাই নিয়ে পথে আগে নামতে হয়। তাহলে সাফল্য অর্জন করা যায়।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা