উদ্যোক্তা আসিফ মিজান

তিন মাস আগেও মানুষ যেটা ভাবেনি সেটাই স্বাভাবিক এখন। গবেষকরা বলছেন, করোনার পর বদলে যাওয়া পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই হবে, যা আগে হয়নি। ‘নতুন স্বাভাবিক জীবন’ বা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ‘নিউ নরমাল লাইফ’-এর সঙ্গে আমাদের জীবনযাপনের সব কিছুতেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নিউ নরমাল লাইফে জীবনরক্ষায় আমাদের বিকল্প অনেক কিছুই গ্রহণ করতে হচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি, রীতিনীতি সব পাল্টে দিচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রভাব রাখছে আমাদের উৎসবেও।

সচেতনতায় নিজ গৃহে অবস্থান করতে হচ্ছে তাই প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার জন্য সকলেই অনলাইনে ঝুঁকেছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার থেকে কোরবানির প্রাণী সবই কিনতে হচ্ছে এই ভার্চুয়াল বাজার থেকে। অনলাইনে কোরবানির প্রাণী কেনাবেচা বেশ কয়েক বছর আগে থেকে হলেও সাম্প্রতিক বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন সফল উদ্যোক্তা আসিফ মিজান।

তিনি অনলাইনে কোরবানির প্রাণী বিক্রয়ের পাশাপাশি রেখেছেন ভাগে কোরবানির সুযোগ এবং সেটি বাসায় পৌঁছে দেয়া। এই করোনাকালীন সময়ে সকলের আর্থিক দিক বিবেচনা করে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। এমন যুগোপযোগী উদ্যোগের খবর পেয়ে উদ্যোক্তা বার্তা টিম ছুটে যায় তার উদ্যোগ Foster Farms Ltd – নোয়াখালী, সুবর্ণচরে।

কথা হয় তার সাথে এবং ঘুরে দেখা হয় তার উদ্যোগ। প্রায় ২২ একর জমির ওপর পরম মমতায় গড়ে তুলেছেন তার স্বপ্নের ক্যাটেল ফার্ম। তিনি জানান, ” এবারের ঈদটা সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা ঈদ। ঘরে বসে শুধু অনলাইনে আস্ত একটা ষাড় কেনা নয়, যদি কেও ভাগে কোরবানি দিতে চায় সেই ব্যবস্থাও রেখেছি। যিনি অংশগ্রহণ করবেন সে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলে ভিডিও কনফারেন্সে কোরবানির টাইম শরিক হতে পারবেন। সেই চেষ্টা করবো এবং সেটা বাসায় হোম ডেলিভারি দেয়া হবে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই”।

এই উদ্যোগের শুরুটা হয় আজ থেকে প্রায় ৩বছর আগে কোরবানির একটা গরু দিয়ে। প্রচন্ড মায়ায় জবাই করেননি সে বার কোরবানিতে। সেটা ছিলো একটা গাভী যা পরবর্তীতে ৩-৪টি বাচ্চা দেয় এবং তার পর থেকেই বলা যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আজ এই ক্যাটেল ফার্মের উদ্যোক্তা তিনি।

একটা গাভী দিয়ে শুরু হলেও আজ তার উদ্যোগে শত গো’র লালন পালন হচ্ছে, যা রক্ষণাবেক্ষণ করেন প্রায় ষাট জন কর্মী। পরম মমতায় পালিত এসব কোরবানির গরু ছাড়াও দুগ্ধের জন্য আছে অনেক গাভী। যা থেকে দুগ্ধজাত খাবারও তৈরী করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই ফার্মের প্রতিটি প্রাণীই অর্গানিক ভাবে পালিত হচ্ছে। গরুর পাশাপাশি পালিত হচ্ছে দেশী জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, ভেড়া এবং ন্যাকেড নিক জাতের বিরল প্রায় মুরগী যা গ্রামবাংলায় ‘গলাছিলা’ মুরগী বলা হয়।

উদ্যোক্তা আসিফ মিজান বলেন, ” আমাদের দেশ থেকে দেশী এবং প্রাকৃতিক সব কিছু ক্রমশ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। আর তাই আমি এগুলোকে খুঁজে খুঁজে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে নেমেছি। সৃষ্টিকর্তা চানতো আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেখবেন আমার এই ফার্মে সব পাখি, প্রাণী শতভাগ দেশী। শতভাগ দেশী পাওয়াটা আসলে খুব মুশকিল, ৯৫ভাগ দেশী হলেও ৫ভাগ অন্য জাতের ক্রস থেকে যায়। তবে দেশী সংগ্রহের সেই চেষ্টায় আছি। আসলে আমি সবসময় কানেক্টেড থাকি দেশী এসব প্রাণীর খোঁজে”।

সরাসরি বিটুবি এবং বিটুসি বিজনেস এবং ফেসবুকে Foster Farms Ltd নামে পেইজের মাধ্যমে তিনি এখন তার উদ্যোগ পরিচালনা করছেন। ঢাকার বনানী তার অফিস। ব্যক্তি পরিচয়ে দু-সন্তানের জনক উদ্যোক্তা আসিফ মিজান ফেনীর সন্তান। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এবং পরবর্তীতে ঢাকা কমার্স কলেজে পড়ুয়া বন্ধুসুলভ বাবা-মায়ের তিন সন্তানের একজন তিনি। কাজিনদের মাঝে আইডল প্রিয় বড়ো ভাই হয়ে থাকেন সবসময়। কর্মীদের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন আসিফ মিজানের পাশে থেকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তার স্ত্রী। বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনদের প্রতি গভীর মমতা এবং দেশের প্রতি ভালবাসা থেকেই আমেরিকার এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাপ্লাই চেইনে স্নাতক সম্পন্ন করেই একদিনও দেরী না করে দেশে ফেরেন। তারপর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্সে মাস্টার্স কমপ্লিট করে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডে চাকরি করেন কিছু দিন। তারপর বাবার রিয়েল স্টেটের ব্যবসায় আসেন কিন্তু তৃপ্তি হচ্ছিলো না যেন । শুরু উদ্যোক্তা জীবনের।

তরুণ এ সফল উদ্যোক্তা বলেন, কৃষিতে অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং আত্মতৃপ্তি আছে। কৃষিতে উদ্যোগ নিয়ে শত শত কর্মসংস্থান করতে পারে। শিক্ষিত তরুণদের অনেক প্রয়োজন এই কৃষি সেক্টরে। শিক্ষিত হয়ে যখন কেউ কৃষকের লাঙ্গলটা হাতে তুলে নেয় তখন তার নান্দনিকতা ভিন্ন একটা মাত্রা পায়। বাঁচতে হলে কৃষি প্রয়োজন, আর কৃষির হাত ধরেই মাছে-ভাতে বাঙালী কথাটি রয়ে যাবে আজীবন।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here