উদ্যোক্তা মিকাইলা উলমার

যে বয়সে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে ব্যবসায়ী বনে গিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এক কিশোরী। তার নাম মিকাইলা উলমার। বয়স মাত্র ১৩ বছর। সে তার প্রতিষ্ঠিত লেমোনেড কোম্পানি ‘মি অ্যান্ড দ্য বিস’ (Me & The Bees) এর সিইও। তার প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনছে লাখ লাখ মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ৫শ’র বেশি সুপারশপে বিক্রি হয় মিকাইলার লেমোনেড। ব্যবসা সামাল দিয়ে স্কুলের পড়াশোনায় ঠিকমত সময় দিতে পারে না সে। তাই এ বছরের পরীক্ষায় গণিতে সে ‘সি’ পেয়েছে। সে নিয়মিত বড় বড় ব্যবসায়িক সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে থাকে। সেখানে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার উপায় ও কিভাবে নিজে এই পর্যায়ে এসেছে সে ব্যাপারে বক্তব্য রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উদ্যোক্তা সম্মেলনেও বক্তা হিসেবে সে নিয়মিত মুখ।

উদ্যোক্তা মিকাইলা বলেন, ‘পড়াশোনায় বেশি সময় দিতে পারি না। পত্রিকা সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিতে হয়, বড় বড় টিভি চ্যানেলে টকশো’র জন্য যেসব আমন্ত্রণ আসে সেগুলো রক্ষা করতে হয়। আর একের পর এক সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ আসে। কষ্ট হলেও সবগুলো আমন্ত্রণ রক্ষা করতে হয়।’

উদ্যোক্তা আরো বলেন, ‘তার প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার বোতল লেমোনেড বিক্রি করে। তার কোম্পানির পণ্যের জন্য যে মধু প্রয়োজন হয় সেই মধু চাষ সে নিজ হাতেই তদারক করে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজারজাত করণের অংশটিও নিজের দায়িত্বে রেখেছে সে’।

যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠতম ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম এই কিশোরী আসলে তার ব্যবসা শুরু করেছিল চার বছর বয়স থেকেই।

বাবা-মায়ের সহযোগিতায় ২০০৯ সালেই সে তার লেমোনেড উৎপাদন ও বিক্রি শুরু করেছিল। দাদীর কাছ থেকে সে ১৯৪০ এর দশকের একটা রেসিপি পেয়েছিল। সেই ফর্মুলায় তৈরী পণ্য নিজের বাড়ির সামনে একটি টেবিল বসিয়ে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করত। মানুষের আগ্রহ যখন বেড়ে গেল তখন সে মজা পেয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে কোম্পানি খুলে বসল। এর পরের অংশ কেবল সফলতার গল্প। মূলধন শত থেকে হাজারে, হাজার থেকে লাখ পেরিয়ে এক পর্যায়ে কোটি ছাড়িয়ে গেল।

তার কোমল পানীয়র প্রধান উপাদান মধু এবং উদ্যোক্তা মিকালিয়া জানায় মধু সংগ্রহ করতে যেয়ে তাকে প্রতি দুই সপ্তাহে অন্তত দুটি মৌমাছির দংশন সহ্য করতে হয়। তবে তার পিতা-মাতা তাকে প্রতিটি মৌমাছির সাইটে পড়ে না থেকে মৌমাছির পরাগায়ন ও বৃহত্তর ইকো-সিস্টেমের উপর গবেষণায় বেশি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

মিকালিয়ার মা-বাবা দুজনই বিজনেস স্কুল থেকে গ্রাজুয়েট করা এবং তারা তাদের মেয়ের ব্যবসায়িক কাজে সক্রিয়ভাবেই অংশগ্রহণ করেন। তবে তারা অকপটেই জানালেন, ফুড সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই।

তারা মার্কেটিং সাইট দেখাশোনা করেন এবং মেয়েকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।তবে, উদ্যোক্তা মিকালিয়াও স্বীকার করে, ‘আমি যেহেতু ছোট মানুষ, তাই আমি আমার আব্বু-আম্মুর পরামর্শকে গুরুত্ব দেই।’

খুব দ্রুতই তার পণ্য পিৎজা শপগুলোতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ব্যাবসায়ের অর্থ সে কেবল নিজে খরচ করে না। অন্যান্য ধনকুবেরদের মতো সে বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর দান করে। দুঃস্থদের জন্য তার আলাদা তহবিল আছে। মৌমাছি নিয়ে কাজ করার কারণে যেসব সংগঠন মৌমাছির সংরক্ষণে কাজ করে মিকালিয়া সেসব সংগঠনকে অর্থ প্রদান করতে উৎসাহ বোধ করেন।

আমেরিকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নিয়মিত দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়ার অভিজ্ঞতাও তার আছে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here