উদ্যোক্তা আসিফের মাসে দেড় কোটি টাকার পণ্য বিক্রি

0
উদ্যোক্তা আসিফ ইকবাল প্রিন্স

ব্যবসাটা আসিফ ইকবাল প্রিন্সের রক্তে মিশে আছে। তার বাবা রহিম আজম রিজোয়ানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করলেও ডাক্তারিকে পেশা হিসেবে বেছে নেননি। তার ইচ্ছা ছিলো ব্যবসা করবেন। তিনি ঠিকাদারি, ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বাবার ব্যবসার খুঁটিনাটি বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন আসিফ।

তাইতো ১৯৯৩ সালে বিভিন্ন ব্যবসার পাশাপাশি পাদুকা নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন আসিফ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাবার কাছ থেকে পনেরো লাখ টাকা মূলধন নিয়ে বাবা-ছেলে মিলে ঢাকায় ‘ঢাকা সু প্লাজা’ নামে একটি জুতার দোকান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। সেসময় জুতা বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানা থেকে জুতা কিনে দোকান সাজাতেন। তার বাবাও মাঝেমধ্যে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন।

উদ্যোক্তা আসিফ ইকবালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল এবং তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করেন। এরপর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি সাহিত্যে স্নাতক এবং শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

দেশে জুতা তৈরির বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ ইকবাল উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, ‘‘ ‘ঢাকা সু প্লাজা’ জুতার জগতে ঢাকা শহরে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠলে ২০০০ সালে ‘প্রিন্স ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন ও থাইল্যান্ড থেকে জুতার সোল ও বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে সারা দেশে সরবরাহ করি। এরপর ২০০৩ সালে জুতার সোল, জুতা ও কাঁচামাল আমদানি ও সরবরাহের পাশাপাশি দেশেই জুতা তৈরি শুরু করি।”

উদ্যোক্তা আরও জানান, ‘ ২০০৭ সালে আমার বাবা সৌদি আরব যান। সেখানে আমরা একটি প্লাস্টিক কারখানা প্রতিষ্ঠা করি। বর্তমানে আমি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০১২ সালে আমি ‘সিএফআর ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আরও ব্যাপক হারে জুতা, জুতার সোল ও উপকরণ আমদানি ও সরবরাহ করতে থাকি। সিএফআর পরবর্তীতে ‘ইউনিকো’ নামে পরিচালিত হচ্ছে।”

এরপর উদ্যোক্তা দেশেই কিছু করার চিন্তা করেন। কারণ তিনি হিসাব করে দেখেন প্রতিবছর আমদানি করে প্রচুর টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ চিন্তা থেকে ২০০৫ সালে ‘বাই জু লিয়ান বাংলাদেশ লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। শুরুতে এটি চীন ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হলেও বর্তমানে এটি শতভাগ দেশীয় জুতা ও জুতার সোল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৬ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর বাই জু লিয়ান বাংলাদেশ লি. ব্যাপক সফলতা পায়। যার ফলে তিনি কিটি ফুটওয়্যার-ডিআইপি, ফিউচার ফুটওয়্যার, লুলু শপ(ব্রান্ড আউটলেট) নামে বেশ কয়েকটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং উদ্যোগের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানান, ‘‘জুতা, জুতার সোল, জুতা তৈরির কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কসমেটিকস, প্লাস্টিক ইত্যাদি প্রায় পনেরো ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছি। বর্তমানে ঢাকার দক্ষিণখানে একটি, উত্তরখানে একটি, রোহিতপুরে একটি ও পঞ্চগড় বিসিক শিল্পনগরীতে একটি, মোট চারটি নিজস্ব কারখানা আছে। এসব কারখানায় প্রতি মাসে এক লাখ জোড়া পণ্য উৎপাদন হয় এবং প্রতি মাসে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়। ঢাকায় চারটি আউটলেট আছে। এছাড়া আমি ঢাকার কেরানিগঞ্জে অবস্থিত এসজে পেপার এন্ড প্লাস্টিক লি. এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এসকল প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’’

আসিফ ইকবাল প্রিন্স শুধু উদ্যোক্তা হয়েই থেমে থাকেননি। সবসময়ই স্বপ্ন দেখেন মানুষের জন্য কিছু করার। এ কারণে তিনি ব্যাক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকেন। তিনি যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে।

তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ইমাম ফাউন্ডেশন’-এর সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন’-এর সহ-সভাপতি ‘ঢাকা ব্লাইন্ড ক্রিকেট ক্লাব-ডিবিসিসি’-এর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ‘লায়ন’স ক্লাব অব ঢাকা’র অন্যতম সদস্য।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here