উদ্যোক্তা- তানহা আক্তার মুক্তা

খিলগাঁওয়ে ছোট শো-রুমটি নতুনরূপে আরও বড় করে একটা শোরুম দিলেন উদ্যোক্তা তানহা আক্তার মুক্তা। করোনাকালীন সময়েও তিনি এমন মনোবল নিয়ে কিভাবে কাজটি শেষ করলেন তা জানতে কথা হয় উদ্যোক্তা বার্তার সাথে। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একজন উদ্যোক্তার জীবনে বিরতি বলে কোনো কথা নেই। কারখানা সিফট করেছি আজ কয়েকদিন হলো। সুরক্ষা মেইনটেইন করে কাজ গুলো করতে বেশ অসুবিধা হয়েছে। তারপরও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সব ঠিকঠাকমতোই করেছি”।

লকডাউনের সময়টাতে কাজ বন্ধ ছিলো কিনা সে প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, “এই মহামারির মাঝেও নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে কাজ চালিয়ে গেছি। দেশের ভেতরের ছোট ছোট অনেক অর্ডারের কাজ সম্পন্ন করেছি। একবারে বন্ধ রাখিনি কারখানা, কর্মী সংখ্যাও নির্দিষ্ট রেখে চালিয়ে নিয়েছি আমার অর্ডারের কাজ”।

তানহা আক্তার মুক্তা মূলত পড়াশোনা সম্পন্ন করে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজ উদ্যোগে শুরু স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথ চলা। যুব-মন্ত্রনালয় থেকে ব্লক, বাটিক, সেলাই সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করেন। এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা’কে কাজে লাগিয়েই ক্রমান্বয়ে গড়ে তুলেন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান “টিএএম ক্রিয়েশন”, “টিএএম লেদার” এবং “টিএএম বুটিক”।

উদ্যোক্তা তানহা আক্তার চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও বাবার সরকারী চাকুরীর কারণে ঢাকায় চলে আসতে হয়। বাবা সরকারী চাকুরীর গোল্ডেন হ্যান্ডশেকে অবসর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এবং কৈশোর থেকেই বাবার ব্যবসা পরিচালনার কলা কৌশল খুব কাছ থেকে দেখেন। কর্মীদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে উৎসাহ দিতে হয় তা বাবার কাছ থেকেই শিখেছেন তিনি।

উদ্যোক্তা তানহা আক্তার বলেন, “আমার ছেলেরা বড় হওয়ায় আর তাদের লেখাপড়ার চাপের কারণে পরবর্তীতে আমি আমার চাকুরিটা ছেড়ে দেই। ছেলেদের লেখাপড়া ও বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পরি। ছেলেদের ও শ্বাশুরীর দেখভাল করতে করতে সময় চলে যেত। কিন্তু আমার যেহেতু প্রচুর কাজ করার অভ্যাস ছিল তাই সময় পেলেই সেলাইয়ের কাজ করতাম। নিজের জামা, বাচ্চাদের জামা আমিই তৈরী করতাম। কেনা-কাটার জন্য যখন মার্কেটে যেতাম আমার মনে হত এটা তো আমিই তৈরী করতে পারবো।

বিভিন্ন কারণে আমার স্বামীও তার চাকুরিটা ছেড়ে দেয়। অসুস্থ শ্বাশুরী ও বাচ্চাদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে আমি ও আমার স্বামী সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেরাই কিছু করবো। আমি তো বেশ কিছু হাতের কাজ জানি, তুমি সাথে থাকলে আল্লাহর রহমতে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। সেই প্রতিষ্ঠানে শুধু আমরা না, আরো অনেকের কাজের ব্যবস্থা হবে। আমারা মনোবল শক্ত করলাম। আমার নামের আদ্যক্ষর নিয়ে “টিএএম ক্রিয়েশন” নাম দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। প্রথমে আমি বুটিক নিয়ে কাজ করি। পরে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে চামড়াজাত পণ্য তৈরী, ব্লক, বাটিক, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, চামড়ার বহুমুখী ব্যবহার, ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স, উদ্যোক্তা ব্যবস্থাপনাসহ বেশ কিছু প্রশিক্ষণ সফলতার সাথে শেষ করি। সামনে আরো কিছু প্রশিক্ষণ নেয়ার ইচ্ছা আছে”।

বর্তমানে তিনি “টিএএম লেদার” এবং “টিএএম বুটিক” নামে দুইটি কারখানা গড়ে তুলেছেন। গরুর শতভাগ বিশুদ্ধ চামড়া দিয়ে বর্তমানে তার কারখানায় ব্যাগ, মানিব্যাগ, বেল্ট, পার্স, চাবির রিং, মোজা, জায়নামাজ, জ্যাকেট, জুতা, স্যান্ডেলসহ সকল ধরনের চামড়াজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে। প্রথম দিকে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে তৈরি পণ্য কিনে বাজারজাত করলেও এখন নিজেই কারখানার প্রতিষ্ঠাতা। ২২ জন নিয়মিত কর্মী কাজ করছেন তার প্রতিষ্ঠানে। ২০২০-এ “৮ম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা” সফলতার সাথে শেষ করেন। ২০১৯-এ বিসিক এর বিজয় মেলায় শ্রেষ্ঠ স্টল নির্বাচিত হন। এছাড়াও পল্লিমা সংসদ, খিলগাঁও এর মিনা বাজার ও আরও কয়েকটি আঞ্চলিক মেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেন সফল এই এসএমই উদ্যোক্তা তানহা আক্তার মুক্তা।

তিনি বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমতে কিছু দক্ষ ও ভালো কারিগর থাকায় পণ্যের বৈচিত্র ও গুণাগুণ নিয়ে বাজারে ভালো একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। সকলের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে আমি “টিএএম” একটি খ্যাতনামা ব্র্যান্ড হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিটি পাবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি”।

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here