ইউরোপ আমেরিকায় যাচ্ছে সুভাষের কচুরিপানার হস্তশিল্প

0
উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মন

কচুরিপানা, টাটকা গো–খাদ্য আর শুকালে হয় জ্বালানি। অধিকাংশরাই এই ধারণা করলেও শুকনা কচুরিপানা থেকেই ঘর সাজানো আর দৈনন্দিন ব্যবহারের দারুণ সব জিনিসপত্র তৈরি করছেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সুভাষ চন্দ্র বর্মন। তার সঙ্গে রয়েছে একদল নারী।

তারা তৈরি হচ্ছে কচুরিপানা থেকে ফুলের টব, হাতব্যাগ, পাপস, ঝুড়িসহ নানা জিনিসপত্র। তাদের কাছ থেকে এসব কিনে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসে।

গাইবান্ধা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রাম। কচুরিপানা নিয়ে ঘরে বসে এই কাজ করে আয় করছেন ২৪৫ জন নারী।

নিভৃত পল্লীতে এই শিল্প গড়ে তোলার পেছনে রয়েছেন কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামেরই সুভাষ চন্দ্র বর্মন (৪৫)। পড়াশুনা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত । ২০০০ সালে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। এক বছর পর চাকরি চলে যায়। এরপর গাজীপুরে একটি হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। সেখানে কচুরিপানা থেকে নানা জিনিসপত্র তৈরি হতো। প্রায় সাত বছর চাকরি করেন। ২০১৬ সালে নিজেই কচুরিপানা থেকে নানা জিনিসপত্র তৈরি শুরু করেন। প্রথম ২০ জন নারী তার অধীনে কাজ করতেন। এখন কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া, বাগুরিয়া, হঠাৎপাড়া, সমিতির বাজার গ্রামের ২৪৫ জন দরিদ্র নারী এই কাজ করছেন।

চিকন লোহার রড দিয়ে ফুলের টব, হ্যান্ড ব্যাগ, ঝুড়ির কাঠামো বানানো হয়। বগুড়ার শেরপুর থেকে এসব কাঠামো তৈরি করে আনা হয়। এরপর শুকনা কচুরিপানা দিয়ে সাজানো হয় ফুলের টব, হ্যান্ড ব্যাগ, পাপস, ঝুড়ি। প্রতিটি ফুলের টব তৈরিতে মজুরিসহ খরচ পড়ে ১০০ টাকা। বিক্রি হয় ১২০ টাকা। এমনিভাবে প্রতিটি হ্যান্ডব্যাগ তৈরিতে উৎপাদন খরচ ২০০ টাকা। বিক্রি হয় ৩০০ টাকা। প্রতিটি ঝুড়ি তৈরিতে উৎপাদন খরচ ৪০ টাকা। বিক্রি হয় ৬০ টাকা। প্রতিটি পাপস তৈরিতে উৎপাদন খরচ ২০০ আর বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়।

ফুলছড়িতে এখন প্রতি কেজি কচুরিপানা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মাসে অন্তত ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কচুরিপানা কিনে থাকেন সুভাষ চন্দ্র বর্মণ। সেই কচুরিপানা দিয়েই তৈরি হয় লেডিস হ্যান্ড ব্যাগ, মাথার হ্যাট, ঘরে পরার স্যান্ডেল, ফ্রুট বাস্কেট, ডাইনিং টেবিল ম্যাট, পেন হোল্ডার, ফুলের টব, বালতি, ফটো-ফ্রেম, ফোল্ডার, চায়ের কোস্টার, রাইটিং প্যাড, লাম্প-শেড ও আরো নানান রকম নিত্য ব্যবহার্য্য হস্তশিল্প পণ্য সামগ্রী।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের যেসব নারী হস্তশিল্পের এসব কাজ করছেন তাদের অনেকেই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা। হতদরিদ্র কর্মহীন নারীদের দিয়ে কচুরিপানার দৃষ্টিনন্দন এসব ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যা দেশের বিভিন্ন বড় শহরে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। এতে দেশের যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে তেমনই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছেন এসব কর্মহীন নারীরাও।

কচুরিপানার হস্ত ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তা সুভাষ চন্দ্র বর্মণ জানান, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছর ঢাকার গাজিপুরের কোনাবাড়ির একটি হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সেখান থেকে কাজটি ভালভাবে শিখে ২০১৬ সালে নিজ গ্রামে মদনেরপাড়ায় কাজটি নিয়ে আসি। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে ২০১৬ সালে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করি।

তিনি বলেন, এখন চারটি পয়েন্টে আড়াই শতাধিক নারী ও কিশোরী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাদের প্রতিদিন মজুরি দিতে হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে কচুরিপানার এই হস্ত ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আরও বড় পরিসরে গড়ে তোলা যাবে।

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here