আমেরিকায় ফোবানা মেলায় উদ্যোক্তা খুরশিদা জাহান

ফোবানা ২০১৮-তে অংশগ্রহণের জন্য আমেরিকার আটলান্টার উদ্দেশ্যে রওনা হই ২৫ জুলাই। ২৬ জুলাই আটলান্টা জর্জিয়া পৌঁছাই। হোটেলে চেক ইন করতে যাবো এমন সময় একজন মহিলা এসে জড়িয়ে ধরলো, চিনতে পারলাম বিগত ফোবানা মেলায় তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো আমার স্টলে। মুগ্ধ হলাম তার আন্তরিকতায়।

উদ্যোক্তা খুরশিদা জাহান

পরদিন, অর্থাৎ ২৭ জুলাই মেলা শুরু হলো। খেয়াল করলাম এবার বাংলাদেশ থেকে একমাত্র আমিই এসেছি। বাকিরা আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে এসেছেন। একজন কলকাতার বাঙ্গালী বৌদি এসেছেন সুদূর কানাডা থেকে।

ডালাস থেকে আসা একজন ভদ্র মহিলাকে দেখে চিনতে পারলাম গত বছর আমার ড্রেস কিনে পরদিন মেলায় এসেছিলো। পরে তার ছবি তুলে সম্মতি নিয়ে আমার ল্যাভিস ডিজাইন এর পেইজে শেয়ার করি। তার সাথে আরো ২ জন বান্ধবী এসেছিলো, তাদের সাথে পরিচয় হলো এবং তারাও আমার কাছ থেকে শাড়ী কিনেছিলো।

ফোবানা মেলায় দেশীয় পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের অবহিত করছেন উদ্যোক্তা

পরদিন ধীরেধীরে লোকজন বাড়তে থাকলো এবং আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। মানুষ আমাকে আর আমার প্রোডাক্টের কথা মনে রেখেছে। আমি হয়তো সবাইকে চিনতে পারি নি, কিন্তু তারা পেরেছে। একজন ব্যবসায়ীয়ের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে? কত বিক্রি করলাম আর কত লাভ হলো, এই হিসাব নিকাশের চেয়ে আমি মনে করি বড় ব্যাপার হলো মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া, তাদের বিশ্বাস অর্জন করা, মানুষের কাছে ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া।

এটা আমেরিকাতে তৃতীয়বারের মতো মেলায়  অংশগ্রহণ করা। প্রতিবার আমেরিকায় যাওয়ার সময় আমার শোরুমের আশপাশের মানুষ এবং অন্যান্য অনেকে আমার কাছে প্রশ্ন করে, আপনি যে আমেরিকায় মেলায় অংশগ্রহণ করেন, আপনার খরচ উঠবে তো? আমিতো খরচ উঠানোর জন্য যাচ্ছি না।  আমার দেশের পণ্য প্রচার করতে যাচ্ছি, এই উত্তরটাই দেই তাদের।

ফোবানা মেলায় ক্রেতা সমাগম

প্রথমবার আমি মেলায় যাওয়ার আগে আমেরিকায় বসবাসকারী আমার এক বান্ধবীর পরিচিতের কাছ থেকে কিছু অর্ডার পাই। আমার এক আত্বীয়ও কিছু অর্ডার করে। তাদের দুজনের কাছে এবং মেলায় বিক্রি করে আমার খরচ উঠে এসেছিলো।

আলহামদুলিল্লাহ্‌,  ২০১৭ সালে ফ্লোরিডার মায়ামিতে দ্বিতীয়বার যখন ফোবানা মেলায় অংশগ্রহণ করি তখন দেখলাম আগের পরিচিত বাঙ্গালীরাও এলো। আবার নতুন অনেকের সাথেও পরিচিত হলাম।

এবার ২০১৮ সালের ফোবানা মেলায় আটলান্টা গিয়ে আমি বুঝতে পারলাম ব্যবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটা কতটা জরুরী। আমেরিকাতে বসবাসকারী বাঙ্গালী ব্যবসায়ীরা যখন দেখলো আমি ঘনঘন এদেশে মেলা করতে যাচ্ছি তখন তারা আমার প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ করলো। ফলে, তারা পাইকারী দরে আমার প্রোডাক্ট অর্ডার করলো।

ক্রেতাদের সামনে পণ্য প্রদর্শন করছেন উদ্যোক্তা

মেলায় একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম যে, পাকিস্তানী ও ইন্ডিয়ান পণ্য বেশী। এমন নয় যে, আমাদের দেশীয় পণ্যের চেয়ে তাদের পণ্যের মান অনেক ভালো। তাদের অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তারা অনলাইনে ইন্ডিয়া থেকে পণ্য আনে। ইন্ডিয়ানরা বেশ প্রফেশনাল এবং অনলাইনে বেশ দক্ষ। তাই তাদের সাথে ব্যবসা করতে তারা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে তাদের সাথে ব্যবসা করবো। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে ও দয়ায় তাদের সাথে স্বল্প পরিসরে হলেও ব্যবসা শুরু করেছি। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একার পক্ষে অনেক দূর যাওয়া কষ্টকর। আমি এপর্যন্ত দেশের বাইরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। সরকারী ও বেসরকারী কোনো সংস্থার সহযোগিতা পেলে ব্যবসা সম্প্রসারণ অনেক দ্রুত হতো এবং অনেক নারী এগিয়ে আসতো বলে আমার বিশ্বাস। বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ করে দিলে তা আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতো। এছাড়া অন্যকোন দেশে অর্থাৎ যেই দেশে যার পণ্য ভালো চলবে, তাকে সেই দেশের মেলার সব তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা করলেই ভালো হবে বলে আমি মনে করি।

ঊদ্যোক্তার স্টলে দেশীয় পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে আলাপ

এরপর আটলান্টার মেলা শেষ করে বেড়াতে যাই। ওখানে অনেক পুরোনো বান্ধবীদের সাথে দেখা হয়। এক বান্ধবী তার বাসায় অনেক বান্ধবীকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ডাকে। সেখানে তারা আমার পণ্য দেখতে চায় এবং অনেক পণ্য বিক্রি হয়। ঘুরে বেড়ালাম জামাইকা, লং আইসল্যান্ড, ম্যানহাটন ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা। অনেকের সাথে ব্যবসায়িক আলাপ হলো। আশা করি, অচিরেই আমেরিকাতে ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবো। সবার দোয়া কামনা করছি যাতে বিদেশে বাংলাদেশের জন্য সুনাম ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।

জর্জিয়া, আটলান্টা থেকে ফিরে উদ্যোক্তা বার্তার জন্য লিখেছেন
খুরশিদা জাহান,নারী উদ্যোক্তা

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here