পাবনা জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শাকিলা জামান। বাল্যকাল এবং কৈশোর জীবন পাবনাতেই কাটে তার। পাবনা এ্যডওয়ার্ড কলেজ থেকে অনার্স শেষ করেন। ২০০২ সালে স্বপরিবারে চলে আসেন ঢাকায়, তারপর ইডেন মহিলা কলেজে ইতিহাস বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন শাকিলা জামান।
পড়াশোনার পাশাপাশি বান্ধবী এবং আত্মীয়দের জন্য নিজ হাতে ডিজাইন করে পোশাক তৈরি করতেন, সেই সাথে নিজেরটাও। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে জয়েন করেন, এরমধ্যে ২০০৭ সালে বিয়ে হন। বিবাহিত জীবন আর চাকরি দুইয়ে মিলে বেশ ভালোই কাটছিলো শাকিলা জামানের।

২০০৮ এ জন্ম নিলো তার প্রথম কন্যা সন্তান। চাকরি, সন্তান আর সংসার সব কিছু নিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে, বাধ্য হন চাকরি ছাড়তে। প্রায় ৫ বছরের চাকরি ছেড়ে সংসার, সন্তান আর নিজে নিজের প্রয়োজনীয়তার লাগাম ধরে রাখাটা খুব যে সহজ ছিল তা কিন্ত নয়। মেয়ের বয়স যখন তিন বছর তখন তাকে স্কুলে দিলেন এবং ভাবলেন আবার চাকরি শুরু করবেন। কিন্তু সুবিধামত চাকরি খুঁজে না পাওয়ায় যথেষ্ট হতাশ হলেন তিনি।
হঠাৎ তার মনে হলো চাকরি ছাড়াও তো অনেক কিছু করা যায়। তার পরিবারের এবং আশেপাশের সবাই তাকে বুটিকস এর কাজের জন্য উৎসাহিত করলো। সবার উৎসাহ, নিজের আত্মবিশ্বাস, মূলধন হিসেবে ননদ তানজিনা নূর মলির কাছ থেকে ৫০০০ এবং স্বামীর কাছে থেকে ৫০০০ মোট ১০,০০০ টাকা নিয়েই ননদের সাথে ব্যবসার উদ্যোগ নেন শাকিলা।

বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার, টেবিল ক্লথ, টেবিল রানার, ম্যাট ইত্যাদি পণ্য সামগ্রী ছাড়াও কোন উৎসবে থ্রিপিস, শাড়ী, পাঞ্জাবি ও তৈরি করেন তিনি। শুরুর দিকে তার এই পণ্যগুলো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু মহলে বিক্রি করলেও ধীরেধীরে তা ছড়িয়ে যায় দেশসহ দেশের বাইরে। ডিজাইন, কাপড় বাছাই, কালার-কম্বিনেশন সব কিছু নিজে নিজেই করেন। ২০১৫ সালে অনলাইন পেইজ খুলেন এবং সেখানে প্রচারণা চালান পণ্যের। এরপর তার ছোট সন্তান জন্ম নেয়ায় প্রায় দের বছর তাকে ব্যবসার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে আবার কাজ শুরু করেন।

শুরুতে কোন লাভের মুখ দেখেননি তিনি। ব্যবসা তেমন ফলপ্রসূ না হওয়ায় স্বামীও তাকে সবকিছু বাদ দিয়ে দিতে বলেন। হাল ছাড়েননি তিনি। সন্তানদের দেখাশোনা, তাদের লেখা পড়া, সংসারের কাজ কর্ম সবকিছু সামলেও নিজের ব্যবসা দেখা, অনলাইন কাস্টমারদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া এমনকি নিজ হাতে পণ্য প্যাকেট করা সব তিনি একা হাতেই করতেন। আস্তে আস্তে ব্যবসা উন্নতির দিকে পৌঁছাতে শুরু করলো। প্রায় ১৫/২০ জন কর্মীর মাধ্যমে অর্ডার ভিত্তিক কাজ গুলো করান।
আজ শাকিলা জামানের এই সাফল্যের পথে তার স্বামীও একমত হয়ে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। এটা তার কাছে অনেক বড় পাওয়া। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম, কাজের একাগ্রতা এবং কাজের প্রতি ভালবাসা সব কিছু নিয়েই গড়ে তুলেছেন অনলাইন ব্যবসা। তিনি তার ব্যবসা কে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনলাইন এর পাশাপাশি শো রুম দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা
Proud of you Aunty??