লক্ষ্মীপুর জেলার বাঞ্চানগর গ্রামের মেয়ে আইরিন সুলতানা। বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর অভাব অনোটনে পড়ে তাদের সংসারটি। সংসারের অসচ্ছলতার মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে সে লক্ষ্যে পড়ালেখা চালিয়ে যান। ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে সেদিনের সেই উদ্যোক্তা আজ সফল।
কখনও হাতের কাজ, কখনো পোশাকে নকশা করে সেই অর্থ দিয়ে পড়ার খরচ যোগাড় করতে হয়। শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইনঞ্জিনিয়ারিং কম্পিউটার বিভাগ এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ/বিএসএস থেকে পাশ করেন। এক বছর মেয়াদী এডভান্স সাটিফিকেট কোর্স কম্পিউটার টেকনোলজিতে অধ্যায়নরত আছেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/12/airin-3.jpg)
আইরিন সুলতানার গ্রহণকৃত প্রশিক্ষণ সমূহ:
• যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
• লক্ষ্মীপুর থেকে ইলেকট্রনিক্স (৬ মাস)
• সেলাই প্রশিক্ষন গ্রহন করেন (৬ মাস)
• বিভিন্ন সময়ে খন্ডকালীন প্রশিক্ষণ -মাছ চাষ, মাসরুম চাষ, সবজি চাষ, হাঁস- মুরগী পালন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
• এছাড়াও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হইতে অটোক্যাড (৬ মাস)
• গ্রাফিক্স ডিজাইন (৬ মাস)
• আউটসোসিং
• সিভিটি এন্ড আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান ৪টি লেবেলে মধ্যে লেবেল ১, ২, ৩ সনদপ্রাপ্ত হন।
• আইডিইবি ওম্যান লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ
• যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, লক্ষ্মীপুর হইতে লিডারশিপ প্রশিক্ষণ
এসমস্ত বিষয় সহ নানা বিষয়ে নানান বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। সর্ব প্রথম ঋণ নিয়ে একটি কম্পিউটার কিনে বাসায় মেয়েদেরকে প্রশিক্ষণ শুরু করেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে বিয়ের পর স্বামীর সামান্য রোজগার সংসার চলতো অনেক কষ্ট করে। তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ার লক্ষ্যে নারীদের উদ্বুদ্ধ ও আর্ত্মনির্ভশীল করতে নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর এ স্থাপিত করেন আইরিন কম্পিউটার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার। কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ফ্রি ব্যবস্থা থাকায় তখন নারীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ভর্তি হয় এবং নারী প্রশিক্ষণে এই ধরনের ব্যবস্থা লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রথম। বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানে মোট ৪০টি ল্যাপটপ এবং মেয়েদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/12/airin5.jpg)
২০১৭ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা সাবেক প্রশাসক জনাব, জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্যারের সহযোগীতায়- আইরিন টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (৬৭০৩৬) নামে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে স্বল্পমেয়াদি বেসিক ৩৬০ ঘন্টা কোর্স চালু করেন।
অফিস এপ্লিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন এন্ড মাল্টিমিডিয়া, হার্ডওয়্যার এন্ড নেটওয়ার্কিং, আটোক্যাড, ড্রাইভিং কাম অটোমেকানিক্স কোর্সের অনুমোদন পেয়ে যান। এছাড়াও আউট সোর্সিং সহ আরো ট্রেডে কার্যত্রম পরিচালনা করে আসছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সফলতায় তার ঝুড়িতে আছে। তার প্রায় দুইশতাধিক শিক্ষার্থী ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/12/airin2.jpg)
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো এক শত শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যেগে কাজে লাগিয়েছেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে ১৩ জন স্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষক আছে। সেলাই প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য কাজের জন্য হাতের কাজ কাজের জন্য ৪ জন আছে বিভিন্ন পোশাকে নকশা করা ব্লক ডিজাইনের কাজ তুলির কাজ এবং হাতের কাজের নকশা করতে উদ্যোক্তাকে সাহায্য করেন।
আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০১৭ “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ “জয়িতা” হন। শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীতে বিভাগীয় পর্যায়ে “শ্রেষ্ঠ জয়িতা” সম্মাননা পান ২০১৮ সালে। ২০২১ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার সফল আত্মকর্মী হিসেবে বিভাগীয় ক্যাটগরিতে চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2021/12/airin4.jpg)
উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি জানান, “আমার বর্তমান মুলধন ৬০ লক্ষ টাকা। আমার জীবন সংগ্রামে প্রতিটি মুহুর্তে যার সহযোগিতা পেয়েছি তিনি হলেন আমার স্বামী মাহাবুবুর রহমান। আমি আজও গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাদের স্মরণ করবো যারা সকল সময় আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমার এই উদ্যোগের পেছনে আমি মনে করি অনুপ্রেরনা আমার মেজো বোন।”
মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা