অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সফলতার দেখা পান রুনা লায়লা

0
উদ্যোক্তা রুনা লায়লা

যশোরের মেয়ে রুনা লায়লা। বাবা মার প্রথম সন্তান তিনি। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়ে রুনা লায়লার পরিবার। পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়াতে তিনি পরিবারের সমস্যাগুলো খুব ছোট থেকে উপলব্ধি করতে শিখেন। কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি এবং রাতে শুয়ে শুয়ে মার সাথে সব কিছু শেয়ার করতেন। কিভাবে তিনি ইনকাম করবেন কিভাবে নিজের এবং পরিবারের সাপোর্ট দিতে পারবেন এইসব নিয়ে। মা-মেয়েকে শান্তনা দিতেন এত চিন্তা করার কিছু নেই আস্তে আস্তে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু মেয়ের মন কিছুতেই মানতো না। কিছু একটা করার তাগিদ সব সময় নিজেকে দিত।

খুব ছোটবেলা থেকেই সেলাই এবং হাতের কাজের দক্ষতা ছিল খুব বেশী লায়লা’র। যেকোনো ডিজাইনের কাজ কিংবা কুশিকাটার কাজ একবার দেখে ফেললেই আয়ত্ত করে নিতে পারতেন তিনি। সারাদিন স্কুল ক্লাস শেষে রাতে বসে বসে নিজের কাজগুলো করে ফেলতেন তিনি। আশে পাশ থেকে দু-একটা করে অর্ডার ও আসতো। খুব বেশি উৎসাহ এবং ভালোলাগা থেকেই কাজগুলো করে ফেলতেন তিনি। আর তাইতো আজ তিনি হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা । কিন্তু তার এই সফলতা একদিনে হাতে আসেনি। অনেক বেশি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই সফলতার দেখা পান তিনি। তার এই উদ্যোক্তা জীবনের পথ চলার অনুপ্রেরণা কেউ তাকে দেয় নাই। তিনি নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছেন।কিন্তু সার্বক্ষণিক পাশে পেয়েছিলেন সহধর্মিণী মাকে।

বর্তমানে কাজ করছেন মূলত থ্রি পিস, ওয়ান পিস, শাড়ি, নকশিকাঁথা,বেডশিড নিয়ে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এবং তা যাতে ইউনিক হয় সে দিক গুলো বিশেষ ভাবে খেয়ালও রাখছেন। কাস্টমারদের সাথে রিলেশন বিল্ডআপে কাজ করছেন। যার ফল স্বরূপ অনেককেই রিপিট কাস্টমার হিসেবে পেয়েছেন। কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজ কাজের অপশন রেখেছেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করছেন। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে গিয়ে অনেক সমস্যাও ফেইস করেছেন তিনি। প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে পণ্য নির্বাচন,নির্বাচিত পণ্য সম্পর্কে নিজের দক্ষতা, নির্বাচিত পণ্যের ব্রান্ডিং করা,টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করতে না পারা এবং কাস্টমার এর কাছে নতুন এই পণ্যকে সঠিক উপায়ে তুলে ধরতে না পারা ইত্যাদি। মহামারী করনার সময়ে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে সেগুলোতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন তিনি।

জীবনে আসা কোনো বাধাই বড় হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তার সাহসিকতার কাছে। আগের চেয়ে দ্বিগুণ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছেন এই উদ্যোক্তা সামনের দিকে।খুব কাছের মানুষের অবহেলা, নির্যাতন কিংবা অবজ্ঞা সবকিছুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলছেন এই উদ্যমী উদ্যোক্তা লায়লা।প্রতিটা সময়ই জীবনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকতে হয়েছে তাকে।কিন্তু কোনো কিছুতেই দমে যাননি তিনি। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে এগিয়ে চলছেন সামনের দিকে।

এসএমই মেলা সহ অন্যান্য মেলায় অংশগ্রহণ এর মাধ্যমে অনেক বেশি লাভবান হতে পেরেছেন এই উদ্যোক্তা। শুধু দেশেই নয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নেপাল, ভারতেও মেলাই অংশগ্রহণ করেন তিনি। একজন সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য কাজের ক্ষেত্রে আপোস হীন থাকতে হয় বলে মনে করেন তিনি। কাজকে ভালবাসতে হয়, সময় দিতে হয় তবে আসে সফলতা।

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে সর্বপ্রথম ধৈর্য থাকতে হবে, নিজের কাজের প্রতি ডেডিকেশন থাকতে হবে, লেগে থাকার মানসিকতা রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত নিজের পণ্য নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং পণ্যে নতুনত্ব ক্রিয়েট করতে হবে বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন একজন সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য অবশ্যই ট্রেনিং গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেনিং দক্ষতা বৃদ্ধিতে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর হাতে কলমে ট্রেনিং তো আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।উদ্যোক্তা নিজেকে যেমন সফল দেখতে চান, ঠিক তেমনি পিছিয়ে পরা নারীদের জন্য কাজ করতে চান। তিনি নারীদেরকে প্রকৃত অর্থে স্বাবলম্বী করতে চান, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিতে চান। এবং তাদের হাত ধরেই তার উদ্যোগ পুস্প হস্তশিল্পকে একটি ব্র্যান্ড নেম হিসেবে পরিচিত করতে চান এবং সফলভাবে বড় করতে চান।

মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here