২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ ১ জুন

0

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থবিভাগ প্রাসঙ্গিক দাপ্তরিক নথির অনুমোদন পেয়েছে। সোমবার (৮ মে) মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সোমবার অর্থবিভাগ প্রাসঙ্গিক দাপ্তরিক নথির অনুমোদন পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নথিতে বাজেটের দিনের দায়িত্বগুলোও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন।’

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের কিছুটা স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হতে পারে। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রদানের শর্তগুলোর চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই আগামী বাজেটে ভর্তুকি ও নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি করা হবে দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত রাখা হতে পারে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনেক আগে থেকেই বাজেট তৈরির কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বাজেটের রূপরেখা তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী।

আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করতে গণভবনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশেষ সভা হবে। সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে। আগামী অর্থবছরে ৭ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। তাতে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এর আকার কমতে বা বাড়তে পারে।

সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ বাজেটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

রাজস্ব আদায় বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্য থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। বর্তমানে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা। এদিকে দুই বছর ধরে প্রতিবছরই করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এবার এ কর কমানো না-ও হতে পারে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের গতি ধরে রাখার পাশাপাশি বাড়তি কর আদায় মনোযোগী হতে আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর না কমানোর চিন্তা চলছে। এ ছাড়াও চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ রয়েছে। আগামী ৩০ জুন এর মেয়াদ শেষ হবে। এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই মেয়াদ বাড়ানো না-ও হতে পারে। আর কালো টাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি, প্লট কেনার সুযোগটিও প্রত্যাহার করা হতে পারে। এ ছাড়া আগামী ৩০ জুন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আর দেশের জিডিপির আকার ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা করা হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আর বিনিয়োগ জিডিপির ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

অন্যদিকে নতুন পে-স্কেলের প্রত্যাশায় থাকা সরকারি চাকরিজীবীরা পে-স্কেলের বদলে আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা পেতে পারেন। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ এ ভাতার জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, নতুন পে-স্কেল দেওয়া হবে না। নির্বাচনের বছরের আগামী বাজেটটি বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট। নতুন বাজেটে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ কিংবা এমপিওভুক্তি করার জন্যও কোনো বরাদ্দ থাকছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে মহার্ঘ ভাতা খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেট চূড়ান্তকরণ-সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তপূরণের জন্য সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কয়েক দফা বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে ভর্তুকি বাবদ বাড়তি বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকির দায় মেটাতে নতুন অর্থবছরের বরাদ্দের একটি অংশ ব্যয় হবে। তবে চলতি অর্থবছরের বকেয়া বাদ দিলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ কম হবে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব খাতে মোট বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে।

গত অর্থবছরের বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সারের দাম বাড়ায় গত অর্থবছর ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হয়। গত বছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে কৃষি ভর্তুকি পরিশোধে ঘাটতি থেকে যায়। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ভর্তুকির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে এ খাতে রাখা হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

সরকার এরই মধ্যে সব ধরনের সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। এ জন্য ভতুর্কির চাপ কিছুটা কমে আসবে। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হতো ১৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৫ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত ৮১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে খাদ্যে ভর্তুকিতে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here