স্বপ্নবাজ এক সফল উদ্যোক্তা আফরিন মমতাজ। কোন বাধাতেই তিনি কখনও থেমে যাননি। সবসময় চেষ্টা করেছেন ভিন্ন কিছু করার। একটা সময় নিজের সময়কে কাজে লাগাতে নেমে পড়েন কাপড় ডিজাইনিংয়ে। ডিজাইন শেষে সেগুলো নিজের হাতে সেলাই করেন। কৈশোরে মায়ের সাথে কাপড় সেলাইয়ের অভিজ্ঞতা আছে তার। সেই অভিজ্ঞতা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি।
আফরিন মমতাজের প্রতিষ্ঠান ঝুম্পুস কালেকশন যা অনলাইনভিত্তিক। মা গৃহিণী, বাবা ব্যবসায়ী। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিদায়ী থানার বানিয়াগাঁও। কিন্তু বড় হয়েছেন ময়মনসিংহ শহরে। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। ঢাকার শ্যামলী আইডিয়াল কলেজে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন প্রায় পাঁচ বছর।
তার উদ্যোগের শুরুটা মূলত প্রথম লকডাউনের সময়। “অনলাইন বিজনেস করবো ভাবনাটা ছাত্রাবস্থায়ই মনে লালন করতাম। বিভিন্ন প্রোগ্রামে নারী উদ্যোক্তাদের কাজ দেখে ভালো লাগতো। নিজেও মায়ের থেকে সকল ধরনের হাতের কাজ শিখেছিলাম। নিজের জামা নিজেই একটা সময় ডিজাইন করে বানাতাম। কোথাও কোন ডিজাইন দেখলে নিজে চেষ্টা করতাম। এভাবেই দশম- একাদশে পড়ার সময় ভাবনাটা ডালপালা মেললো। উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখা সেখান থেকেই।”
তিনি বলেন: যেহেতু এসএসসি, এইচএসসি বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছি তাই পড়াশোনার চাপে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা চাপা পড়ে যায়। তারপর বিসিএস প্রস্তুতি, চাকরি নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ২০২০ সালে করোনার শুরুতে ঘরে বন্দী জীবন। আমি কাজ ছাড়া অলস বসে থাকতে পারি না। তাই তখন অলস সময়গুলো অসহ্য লাগতো। বিজনেসের স্বপ্নটা আবার ঠিক তখনই জেগে উঠলো। কিন্তু কিভাবে শুরু করবো সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। বরের সাথে পরামর্শ করলাম। তিনি তখন আমাকে সাহস দিলেন। লকডাউনের মাঝেই কিছু পণ্য এনে হাতের কাজ করে শুরু করলাম বিজনেস। অনলাইনে বিজনেস শুরু হলো তখন থেকেই।
শুরু করেছিলেন মাত্র তিন হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি, থ্রিপিস, খাদি পাঞ্জাবি ও তাঁতের শাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করেন । মুলত চার ধরনের পণ্য তার। হাতের কাজের পণ্য, হ্যান্ডপেইন্ট পণ্য নিজে তৈরি করেন। জামালপুর থেকেও হাতের কাজের পণ্য তৈরি করে আনা হয়। পাঁচজন কর্মী আছে তার। অনলাইনের পেজ ঝুম্পুস কালেকশনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে কাজ করেন। পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়নি। তবে কোন না কোন মাধ্যমে প্রবাসীরা সংগ্রহ করেছেন। অস্ট্রেলিয়া-কানাডা প্রবাসী কিছু পরিচিতজন নিয়েছেন। দেশের সকল জেলায়ই তার পণ্য যায়।
মাসে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করেন। কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়। ‘পরিবার আমার কাজে সবসময় সহযোগিতা করেছে। তাই আজ আমি সফল হতে পেরেছি,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের দেশীয় পণ্যের প্রচার ও প্রসার। নিজের উদ্যোগ ঝুম্পুস কালেকশনের মাধ্যমে অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ: না বুঝে উদ্যোগ শুরু করা উচিৎ নয়। একটু জেনে, বুঝে সময় নিয়ে উদ্যোগ শুরু করা ভালো। বেশি পণ্য স্টক করা ঠিক নয়। সবচেয়ে বড় কথা নিজে যে কাজটি করতে ভালোবাসেন, ভালো জ্ঞান আছে যে বিষয়ে, সেটা নিয়েই কাজ করা উচিৎ।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা