প্রকৌশলী হয়েও ‘কৃষি উদ্যোক্তা’ হাসান আলি

0

হাসান আলি অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক সম্পন্ন করে কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করছেন । 

স্বাভাবিক ভাবেই হাসানের কোন আইটি সেক্টরে চাকরি করার কথা, কিন্তু তিনি কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করছেন। যেখানে মেধাবী এবং শিক্ষিতরা দেশের বাইরে গিয়ে অন্য দেশে কাজ করছেন সেখানে তিনি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ে হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা।

মো. হাসান আলি নওগাঁ থেকে ঢাকা আসেন পড়াশোনার জন্য। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। তার চিন্তা-চেতনায় ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা। নিজের, দেশ ও দশের জন্য কিছু করবেন, যা চাকরি করে করা সম্ভব না। তাই শুরু করলেন ব্যবসা।

২০১৫ সালে মাত্র ৯০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন চালের ব্যবসা। আস্তে আস্তে শ্রম ও মেধা দিয়ে ব্যবসাকে করেছেন আরও বড়। প্রায় ৪০ রকমের পণ্য বেচা-কেনা করেন এই উদ্যোক্তা। চাল, ডাল, গম, তেল সহ বিভিন্ন পণ্য।


তিনি এমন একটা সেক্টর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন যেটা নিয়ে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহী না। এমন কি বাবা কৃষক, সেইটা বলতেও লজ্জাবোধ করে। কিন্তু হাসান আলি নিজ থেকেই কৃষিপণ্য নিয়ে ব্যবসা করে হয়েছেন উদ্যোক্তা।

কৃষিপণ্য কিভাবে ন্যায্য মূল্যে বেচা-কেনা করা যায় সেই দিকটা নিয়েই কাজ করছেন এই উদ্যোক্তা। বানিয়েছেন অ্যাপস।

বেচা-কেনা অ্যাপস’র মাধ্যমে যে কোন জায়গা থেকে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যাবে। যার জন্য লাগবে শুধু মাত্র একটা প্রোফাইল বা একাউন্ট।

কৃষকের সব উৎপাদিত পণ্য ঘরে বসে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে এমন এক ধরণের অ্যাপস-এর কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। যেখানে কৃষক সব পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করতে পারবেন।

কিন্তু সব কৃষকতো শিক্ষিত না। তখন কিভাবে তারা এই সেবা পাবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবার প্রোফাইল বা একাউন্ট না থাকলেও হবে। যে কৃষক যে এলাকাতে থাকবেন ঐ এলাকার যেসব দোকান থাকবে কনজিউমার পণ্যের; সেইসব দোকানে গেলেই তারা এই সেবা পাবে। অনেকটা বিকাশের মতো। এক প্রোফাইল থেকে একাধিক কৃষক পণ্য বেচা-কেনা করতে পারবেন।


ব্যবসাতে হাসান আলি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, যেহেতু চালের ব্যবসা করি সেহেতু বাকিতে পণ্য দিতে হয়। বাকিতে পণ্য দেওয়ার ফলে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে টাকা পরিশোধ করে না। নওগাঁ থেকে ঢাকাতে চাল আনার সময় গাড়ী নষ্ট হওয়ার কারণে ছিনতাইও হয়েছে। স্বল্প পুঁজি তো আছেই।

স্বল্প পুঁজি সহ অনেক বাধা অতিক্রম করেই তিনি হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। যার মূল কারণ ছিল সাহস, সততা ও কর্মদক্ষতা।

তিনি বলেন, “একজন উদ্যোক্তার কাছে সব থেকে আনন্দের ব্যাপার যখন তিনি  চিন্তা করেন কিছু একটা করবো এবং সেই কাজটা বাস্তবায়িত হয় তখন যে আনন্দটা হয়, সেইটা আসলে বলে বোঝানো যাবেনা। ”

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ” উদ্যোক্তা হতে হলে আগে ব্যবসা করার মন মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে,  ব্যবসার পূর্ণরূপ ব্য-ব্যবহার, ব-বুদ্ধি ও সা-সাহস। এই তিনটি গুণ থাকতে হবে এবং সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে। ভবিষ্যতে ব্যবসাকে বড় করার চিন্তা থাকতে হবে তাহলেই একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। অল্প কিছু দিনের জন্য ব্যবসা করার চিন্তা না করাই ভালো।”

সাপোর্ট হিসেবে পাশে পেয়েছেন পরিবার, বন্ধু এবং সব সাপ্লাইয়ারকে। ৯০ হাজার টাকার পুঁজি এখন কোটি টাকার মূলধনে পরিণত হয়েছে এই উদ্যোক্তার। নিজে কিছু করবেন এবং সাথে অন্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে সেই ইচ্ছা থেকেই সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন হাসান আলি।

হাসানের ভাষ্য, আমরা আমাদের কৃষি পণ্য নিয়ে একটু মেধা আর শ্রম দিয়ে কাজ করলে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকবে না। প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে প্রযুক্তি।

 

খাদিজা ইসলাম স্বপ্না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here