ফাতেহা ছোটবেলায় বাবা কে হারিয়ে মায়ের কাছে থেকেই বড় হয়েছেন। পাঁচ বোনের মধ্যে সবার ছোট ফাতেহা। মায়ের মৃত্যুর পর কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে বোনদের সহযোগিতায় শুরু করেন অনলাইন ব্যবসা এবং হয়ে ওঠেন সফল উদ্যোক্তা।
ফাতেহা আক্তার পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে; ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) থেকে। মায়ের মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে ‘গহনার হাটবাজার’ নামক অনলাইন পেজের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেন ফাতেহা।
ছোট থেকেই ডিজাইনিং এ বিশেষ আকর্ষণ ছিল ফাতেহার। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করতে চাইতেন। দেশী গহনা অনেক ভাল লাগতো। তাই নিজে ডিজাইন করে কিছু রূপার নাকের নথ বানিয়েছিলেন কারিগর দিয়ে।
পেইজ খুলেন ‘গহনার হাটবাজার’ নাম দিয়ে। পণ্য পেইজ এ দেওয়ার পর, অসম্ভব ভাল সাড়া পেয়ে যান ফাতেহা। বড় বোনদের থেকে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন পথ চলা।
উদ্যোক্তা বার্তাকে ফাতেহা জানান শুরুতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নামলেও এখন তা তিন বছরে ৩০ লাখ টাকায় পরিণত হয়েছে। গহনার হাটবাজারে খোপার কাটা থেকে শুরু করে পায়ের নুপুর পর্যন্ত সব ধরণের গহনা পাওয়া যায়। ব্রাইডাল, ট্রাডিশনাল সহ রূপার, গোল্ড প্লেটেড ইত্যাদি। যার সর্বনিম্ন মূল্য ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ মূল্য ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ফাতেহা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন “প্রথমেই বাধা ছিল সঠিক জ্ঞানের এবং বুস্টিং সম্পর্কে কম ধারণার। সঠিক প্রোডাক্ট শুট না করতে পারা সহ এ রকম বিভিন্ন ধরণের বাধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু পিছিয়ে পড়িনি। বাধা সামলিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছি।”
যেহেতু সব গহনা নিজের কারখানায় কারিগরদের দিয়ে বানাতেন সেহেতু প্রথম দিকে কারখানা এবং কারিগর সামলানো অনেকটা কঠিন ছিল বলে জানান ফাতেহা।
ভবিষ্যতে গহনার হাটবাজারকে একটি দেশীয় গহনার বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং যত দেশীয় কারিগর আছেন তাদের জন্যও কিছু করতে চান ফাতেহা।
বর্তমানে ছয় জন কারিগর এবং তিন জন অফিস স্টাফ আছেন গহনার হাটবাজারে। মোট নয় জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন, ভবিষ্যতে আরো মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান ফাতেহা।
পড়াশোনা শেষ করে অনেক মানুষকে চাকরি না পাওয়ার কষ্ট সহ্য করতে দেখেছেন ফাতেহা। তাই উদ্যোক্তা হয়ে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরো মানুষের কর্মসংস্থান গড়তে চান। বর্তমানে প্রায় তিন লাখ লাইক সমৃদ্ধ পেইজ এর পাশাপাশি দশ হাজার নিয়মিত গ্রাহক আছে গহনার হাটবাজারে।
ফাতেহা মনে করেন, বাজার নিয়ে সঠিক গবেষণা দরকার, মার্কেটিং এবং প্রেজেন্টেশন এ বিশেষ নজর আবশ্যিক। সর্বোপরি সৎ ভাবে কাজ করা দরকার।
আমার মা চাইতেন আমরা সব বোন যেন সাবলম্বী হই। মায়ের এই চাওয়া, সংগ্রাম, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ফাতেহাকে এতদূর আসতে উৎসাহিত করেছে।
নিজের ভাগ্যকে নিজেই গড়ে নিতে হয় কথাটি যেন ফাতেহার জন্যই। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের সাথে থেকে সংগ্রাম করে, অনুপ্রেরণা নিয়ে হয়েছেন সফল নারী উদ্যোক্তা। হওয়ার কথা ছিল চাকরিজীবী কিন্তু হয়েছেন উদ্যোক্তা; কারণ তিনি চাকরি করবেন না, বরং চাকরি দেবেন।
খাদিজা ইসলাম স্বপ্না