মাত্র ৩০০০ ডলার নিয়ে আমেরিকাতে পড়তে যান। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য নিরাপত্তাকর্মী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নোট তৈরী করে দেওয়া এবং বার্গার কিং রেস্টুরেন্টে কাজ করে আজ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনকুবেরদের তালিকায় নাম লিখানো মানুষটির নাম নিকেশ অরোরা।
আজ ৫০ বছর বয়সী নিকেশ অরোরা একটি বিলাশবহুল জীবন যাপন করেছেন তবে এমন একটি সময় ছিল যখন তিনি ঋণগ্রস্থ ছিলেন এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছোট চাকরিও করেছেন। নিজের দক্ষতাকে ক্রমাগত উন্নীত করে ঝুঁকি নিয়েছিলেন, যা সাধারণত অন্যরা করে না। আজ তিনি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত প্রযুক্তি খাতের বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।
নিকেশ ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বৈদ্যুতিক প্রকৌশল বিভাগে ডিগ্রি অর্জনের জন্য বোর্ড অফ হায়ার এডুকেশন-এ (বিএইচই) আইআইটিতে ভর্তি হন। স্নাতক শেষ করার পরে তিনি ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস’র (WIPRO) সাথে কাজ করেন। এরপর তিনি এমবিএ করার জন্য আমেরিকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মাত্র ২১ বছর বয়সে নিকেশ তার বাবার কাছ থেকে ৩০০০ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন এবং তার সম্পত্তি বলতে ছিল দুটি স্যুটকেস, যা নিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে গিয়ে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনও হতাশ হননি তিনি কোনো না কোনভাবে সমাধানের পথ ঠিকই বের করে নিয়েছেন। কারণ পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি চাকরি করতেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি নিকেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি’র নিরাপত্তা প্রহরী, মাঝেমধ্যে প্রতিবন্ধীদের পড়াশোনার নোট তৈরী করে দেওয়া, আবার অনেক শিক্ষার্থীদের কর্পোরেট ফিনান্স পড়াতেন। এছাড়াও সপ্তাহে দুই দিন বার্গার কিং-এ গিয়ে বার্গার পরিবেশন করতেন । আজকের শিক্ষার্থীরা এই কাজগুলো করার কথা কখনও চিন্তাও করতে পারে না। তবে তিনি করেছিলেন; শুধুমাত্র পড়াশোনা আর নিজের খরচ চালাতে। প্রতিটি সংগ্রামই তার মধ্যে এক নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করেছিল। যা তার ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে এসেছিল।
আমেরিকাতে পড়াশোনা শেষ করার আগে, তিনি চাকরির জন্য প্রায় ৪৫০ টি সংস্থাতে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তাদের মধ্যে কেউই তাকে চাকরির জন্য ডাকেনি। অবশেষে একদিন তিনি একটি সংস্থায় কাজ পান। ১৯৯২ সালে ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্ট সংস্থায় তিনি তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে সেখানে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন।
নিকেশ কয়েক বছর ধরে টেলিকম সেক্টরে কাজ করছেন। তখন তার জীবনে একটি বড় পরিবর্তন আসে। ২০০৪ সালে যখন তিনি গুগলে যোগদান করেন। ২০১১ সাল নাগাদ তিনি গুগলের সার্চ জায়ান্টের চিফ বিজনেস অফিসার এবং গুগলের সর্বোচ্চ বেতনভোগী কর্মচারী হয়ে উঠেছিলেন। তার বার্ষিক বেতন হয়েছিল প্রায় ৩১০ কোটি টাকা। তিনি গুগলে চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থাৎ সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রিন এবং চেয়ারম্যান এরিক স্মিটের পরের অবস্থান।
তিনি বলেন “আমি এমন জায়গা গুলিতে কাজ করতে পছন্দ করি যেটা খুবই গতিময় এবং সেখানকার পরিস্থিতি নিয়মিত পরিবর্তিত হয়।” বর্তমানে তিনি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম “পলো আল্টোতে” বার্ষিক ৮৫৭ কোটি রুপি বেতনে কর্মরত আছেন।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদনে এসেছে, তিনি পৃথিবীপর্যটক হওয়া সত্ত্বেও তিনি একজন ভারতীয়। তাঁর সহকর্মীরা বলেছেন, তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে এখনও তার জীবনের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে পালন করেন। তিনি ঘরে ভারতীয় খাবার খান এবং তাঁর পরিবারও হিন্দিতে কথা বলেন। আবার গভীর রাত হলেও, সমস্ত ভারতীয়দের মতো তিনি ক্রিকেট খেলা দেখেন।
নিকেশ আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করেন যাতে আমাদের প্রতিভা বিকশিত হয়। তিনি কঠোর পরিশ্রম এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আজ নিজেকে একজন দক্ষ মানুষে পরিণত করেছেন। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণীয়।