জামদানি শিল্পের কর্মী হিসেবে ১৯৮৮ সালে কাজ শুরু করে মোঃ আবুল খায়ের। বড় ভাই জয়নাল আবেদিনের কাছে কাজ শেখা, প্রথম দুই বছর খায়েরের কোন বেতন ছিল না, পরের পাঁচ বছর সহকারী হিসেবে মাসে চার হাজার টাকা করে আয় শুরু করে। পরের পাঁচ বছর পূর্ণ কর্মী হিসেবে জামদানি বানানোর কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন খায়ের। ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়ের বর্তমানে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে পরিচালনা করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যবসা।
বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালবাসে জামদানি শাড়ি।এই ভালোবাসা কে সব চাইতে বড় শক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর কথা চিন্তা করলেন জামদানি শিল্পের এক সুনিপুণ কারিগর কর্মী আবুল খায়ের। স্বপ্ন দেখে ফেললেন হবেন একজন উদ্যোক্তা। নিজেই পরিচালনা করবে নিজের ব্যবসা।
খায়ের উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, বড় ভাইয়ের সঙ্গে সংসদ ভবনে জামদানি মেলায় শাড়ি বিক্রি করে সিদ্ধান্ত নেই নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। জামদানির চাহিদা অনেক, তাইতো ১৯৯৯ সালে জমানো মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করি। পাঁচটি তাঁত মেশিন বসালাম। সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ টি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা দামের জামদানী শাড়ি তৈরি শুরু করলাম কারখানায়। প্রথম চালানেই লাভ হল।
উদ্যোক্তার সফলতার গল্প দেখুন ইউটিউবে-দেখতে ক্লিক করুন
একে একে প্রতিটি বছরে প্রায় দুইটি করে তাঁত মেশিন, প্রতিদিনে জামদানির বুনন হতে থাকে খায়েরের কারখানায়। সপ্তাহে নামতে থাকে নতুন নতুন শাড়ি এবং উদ্যোক্তা ভাঙ্গতে থাকেন সফলতার সিঁড়ি। ১৬ টি তাঁত মেশিনে ৩২ জন কর্মী। ২০১২ সালে নতুন তাঁতের মেশিন তো যোগ হলোই ২০টি, সেই সাথে সারা মার্কেটে সুনাম ছড়িয়ে পরে।
বর্তমানে ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করছে খায়ের
খায়েরের তাঁত থেকে উৎপাদিত শাড়ি গুলো কানে কানে বলে দিল এগিয়ে যাবার কথা। ফিসফিস করে তিনি যেন শুনতে পান সফলতা আসবেই। ভোর ৬ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা একটা টানা কাজ করে ওই সময় প্রতিদিন ১০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল সে। জামদানির ক্রমাগত উৎপাদন জানিয়ে দিল, সফলতার সিঁড়ি ভাঙ্গতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তা আবুল খায়ের।
তিনি জানান, ২০০০ সাল, ব্যাপক অর্ডার আসতে শুরু করল, তাঁত বসালাম আরও দুটি। ২০০২ সালে ১৪ জন কর্মী এবং ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রমে প্রতি সপ্তাহে ৭ টা করে জামদানি শাড়ি বানাতে শুরু করল। ২০০৪ সালে নতুন তিনটি তাঁত, মোট তাঁতের সংখ্যা ১০টি, কর্মী সংখ্যা ২০। ২০০৬ সালে নতুন দুইটি, ২০০৭ দুইটি, ২০০৯ তিনটি, ২০১০ আরও দুইটি।
উদ্যোক্তা খায়ের জানান, ঢাকার অভিজাত বিপণী বিতান গুলোতে নিজে গিয়ে সপ্তাহে শাড়ি দিয়ে আসতাম। শাড়ির অর্ডার বাড়তেই থাকে। ২০১৩ সালে জাপানের মার্কেটে শাড়ি দেয়া চলছিল। জাপানে বাংলাদেশ সরকারের যৌথ আয়োজনে সাংস্কৃতিক মেলায় অংশ নিলাম একজন জামদানি শিল্পী হিসেবে। ১৫০ জনের ওপরে শিল্পী। সকলে মিলে একসাথে একটি বিদেশ ট্যুর। এই ট্যুরে অনেককেই চিনলেন, জানলেন এই গুণী কারিগর। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে অনেক নতুন কাস্টমার যোগ হলো আবুল খায়েরের জামদানির ভুবনে।

উদ্যোক্তা আবুল খায়েরের কারখানায় চলছে জামদানি শাড়ি তৈরি
চার হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের শাড়ি উৎপাদিত হচ্ছে আবুল খায়েরের জামদানির ফ্যাক্টরীতে। ২০১৪ সাল ২৪টি মেশিন, ২০১৫ সাল ২৮টি মেশিন, ২০১৬ সাল ৩৪টি মেশিন, ২০১৭ সাল ৪০টি মেশিনে বর্তমানে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৮০ জন কর্মী মিলে উৎপাদন করছে মনোমুগ্ধকর জামদানি।
খায়ের উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: আমি শুধু লাভের মুখ দেখবো বলে বসে থাকি নি, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি, নিজের কারখানায় কাজ দিয়ে তাদের পরিবার গুলোকে করেছি স্বচ্ছল। বর্তমানে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জামদানি বুনেন খায়ের। মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়ের আজ সফল একজন উদ্যোক্তা হয়ে পরিচালনা করছেন প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যবসা।
সুতি জামদানি, ইঞ্চি পাড় জামদানি, বেলপাতা পাড় জামদানি, দুবলা পাতা পাড়, শামুক পাড়, লতাপাতা পাড়, কচুপাতা পাড়, পান পাড় কোনটা চান?? এমন শত শত শাড়ির ডিজাইনে নয়ন জুড়াবে আজ ক্রেতাদের বাংলার আদি অকৃত্রিম ঐতিহ্যের জামদানিতে।








