উদ্যোক্তা রওনক জাহানের তৈরি পণ্য

আমার ক্রেতারা আমাকে এখনও চেনেনা কিন্তু মানে ডিজাইনে ভালো হওয়ায় আমার পণ্যগুলো চিনে এবং নিয়মিত আমার কাছ থেকেই কিনে কথা গুলো বলে হাসতে হাসতে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করলেন উদ্যোক্তা রওনক জাহান।

চাইলেই বিদেশ গিয়ে জমকালো লাইফলিড করতে পারতেন সেই সুযোগ ছিলো, এখনও আছে। তিন ভাই-বোন সবাই দেশের বাহিরে, তাকেও নিয়ে যেতে চায় কিন্তু দেশ ছেড়ে তার যেতে ইচ্ছে হয়না একদমই। সবাই তো টক অব দ্য টাউন হতে চায়না, সবাই লাইম লাইনেও আসতে চায়না। কিছু মানুষ নিভৃতে থেকেই কাজ করতে পছন্দ করেন। ঠিক তেমনই নিভৃতচারী উদ্যোক্তা রওনক জাহান।

তিনি জানালেন, প্রচন্ড ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার আবার ফ্যাশন ডিজাইন ছিলো প্যাশন আর ব্যাংকার বাবার ইচ্ছে মেয়ে ব্যাংকার হবে। শেষে বাবার ইচ্ছেই প্রাধান্য পেলো বিবিএ পড়লেন। ব্যাংকে চাকরির সুযোগও আসলো কিন্তু করলেন না। বাবাকে বোঝালেন সকাল-সন্ধ্যা অফিস তার পছন্দ নয়। চাকরি শুরুর আগেই হয়ে গেলো বিয়ে-সন্তান। কিন্তু দাম্পত্যকলহে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। মা তখন খুব করে অনুপ্রাণিত করেছিল আমার প্যাশন নিয়ে কাজ করার।

মায়ের কথায় শুরু হলো রওনকের উদ্যোক্তা হবার পথে যাত্রা। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এ কে হাই স্কুল রোডের বাসাতে এপ্লিকের কাজ দিয়ে শুরু করলেন তারপর জামদানী নিয়ে কিছু কাজ। অনলাইনে পেইজ খুললেন “আরএস হ্যান্ডিক্রাফট” নামে। দারুণ সাড়া পেলেন। মূলত সব দেশী পণ্য হওয়ায় ঢাকাতো বটেই ঢাকার বাহির থেকেও অর্ডার আসতে থাকে। বাদ যায়নি সমাজের এটিল ক্লাস থেকে সেলিব্রিটিরা কিন্তু ক্রেতাদের চাহিদা থাকে অনেক ধরনের পণ্যের যেগুলো নতুন উদ্যোক্তা রওনক জাহানের কাছে ছিলো না।

তাই ক্রেতাদের পছন্দের দিক বিবেচনা করে, প্যাচ-ওয়ার্ক, বাটিক, তাঁতের, এপ্লিকের মধ্যে ফতুয়া, পাঞ্জাবী, শার্ট সাথে বাচ্চাদের ড্রেস আর মেয়েদের জন্য প্রায় সকল আইটেম তৈরী করা শুরু করলেন। একটা ফ্যাক্টরি লিজ নিলেন সেখানে প্রায় স্থায়ী-অস্থায়ী ভাবে ১০-১৫জন কর্মী কাজ শুরু করলেন। অনলাইনে বেশ ভালো সেল হতে থাকে। এখনও কোন শো-রুম নেই। তবে তারজন্য ব্যবসা থেমে নেই বেশ ভালোই চলছে।

উদ্যোক্তা বার্তাকে রওনক জাহান বলেন, “মানে ভালো হলে সেল হবেই, তবে অনলাইনে পণ্যের ছবির সাথে বাস্তবেও তার মিলা থাকা চাই। ক্রেতা হাতে নিলে সে যেনো সন্তুষ্ট থাকে।

মাত্র ৭হাজার টাকা নিয়ে শুরু করে চার বছরে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। পরিচালনা করছেন সফল ভাবে তার ব্যবসা। নিজে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং ঘুরে দাঁড়াতে পথ দেখিয়েছেন অনেক নারী-পুরুষকে।
তিনি বলেন, আমার তৈরী পণ্যের সকল ডিজাইন নিজেই করি। আমার ছেলে ক্লাস থ্রি তে পড়ে, তাই সন্তানের পেছনে অনেক সময় দিয়ে থাকি। তাই আমার মা প্যাচ-ওয়ার্কের কাজগুলো পুরোটাই দেখেন।
সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মা সার্বক্ষনিক পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এমন প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তা রওনক জাহান বলেন, এই ব্যবসা করছি এটাই করবো। দেশ এবং দেশের পণ্য নিয়ে থাকতে চাই। আমার দোকানে থাকবে সম্পূর্ণ দেশীয় পণ্য। শুধু এখন একটা দোকানের প্রয়োজন বোধ করছি যেখানে ক্রেতারা এসে পাবে তাদের পছন্দের ড্রেস এবং সেখানে কর্মসংস্থানও।

 

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here