আজ ৩০ এপ্রিল এসএমই ফাউন্ডেশনের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হলো “এসএমই বান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৯-২০”। এসএমই ফাউন্ডেশন রাজস্ব বোর্ডের বিবেচনার জন্য আমদানি পর্যায়ের শুল্ক-কর সম্পর্কিত ২০টি প্রস্তাব, মূসক সম্পর্কিত ৯টি প্রস্তাব এবং আয়কর সম্পর্কিত ৫টি প্রস্তাব নিয়ে মোট ৩৪টি প্রস্তাব করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমই ফাউন্ডেশন, সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা, শাহাবুদ্দীন আহমেদ, এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মোঃ আব্দুল মতিনসহ আরও অনেকেই।
আমদানি পর্যায়ের ২০টি শুল্ক-কর সম্পর্কিত প্রস্তাবের মধ্যে ৯টি প্রস্তাবে ফেরো-এলয়জ্ এবং এ্যালুমিনিয়াম এলয়জ্ ও ওয়েস্ট এ্যান্ড স্ক্রাপ, Other Alloy Steel এবং তা থেকে তৈরি Hollow Drill Bars & Rods এবং Stainless Steel sheet, Bars & Rods ও wire, কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরীতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ, কয়ার ফাইবার (নারিকেলের ছোবড়ার তন্তু), ফিলার মাষ্টারব্যাচ এবং কালার মাষ্টারব্যাচ, পিভিসি স্টেবিলাইজার, স্টিয়ারিক এসিড পলিইথাইলিন ওয়াক্স, প্রিন্টেড মেলামাইন ট্রান্সফার পেপার এবং আনপ্রিন্টেড পিভিসি, পলিয়েস্টার এবং পলি-এমাইড (নাইলন) ফিল্ম ইন রোল, ইউরিয়া মেল্ডিং কম্পাউন্ড, ইউরিয়া রেজিনস্, থায়ো-ইউরিয়া রেজিনস্ এর শুল্ক হার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দুটি প্রস্তাবে দেশী শিল্পের সংরক্ষণের জন্য স্টেনইলেস স্টিলের তৈরী টেবিলে ব্যবহার্য, কিচেনে ব্যবহার্য এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য সামগ্রী এবং স্টেনলেস স্টিলের তৈরী বিবিধ পণ্য এবং বেয়ারিং সম্বলিত ও বেয়ারিংবিহীন কব্জার ট্যারিফমূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে হাল্কা প্রকৌশল শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী শিল্প, প্লাস্টিক ও মেলামাইন শিল্প এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শিল্প বিকাশের সুযোগ পাবে।
ছয়টি প্রস্তাবে আমদানীকৃত তৈরী লীফ স্প্রিং, প্রাকৃতিক মধু, অন্যান্য সুইচ, হোল্ডার, অন্যান্য (বৈদ্যুতিক প্লাগ, সকেট), অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্য (বৈদ্যুতিক কেবলস্ টাই ও কেবলস্ ক্লিপ), সুইচ সকেট এর যন্ত্রাংশ (সিকেডি/এসকেডি) এবং কানেক্টর সংযুক্ত এক্সটেনশন কর্ডের উপর শুল্ক/ রেগুলেটরি শুল্ক/সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দেশী উৎপাদকগণ সংরক্ষণ পেয়ে উপকৃত হবে।
অপর দুটি প্রস্তাবে কাস্টমস্ বন্ডের ব্যবস্থাপনায় ও সম্প্রসারনে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সম-সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূসক সম্পর্কিত নয়টি প্রস্তাবের মধ্যে পাঁচটি প্রস্তাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পজাত পণ্যের উপর হ্রাসকৃত হারে মূসক আরোপ, মূল্য সংযোজন নিরুপন ও রেয়াত সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম ক্ষুদ্র মাঝারী সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেলায় হ্রাসকৃত মূসক আরোপের বিকল্প প্রস্তাব, রপ্তানি সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সকল পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ এবং দেশে উৎপাদিত মধু সম্পূর্ণ মূসক মওকুফ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সব প্রস্তাব বিবেচনা করা হলে দেশের এসব শিল্প উপকৃত হবে এবং দেশ স্বনির্ভরতার পথে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে।
একটি প্রস্তাবে পলিথিনের সমন্বয়ে তৈরী এবং শিল্পে ব্যবহার্য মোড়কের উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বিবেচিত হলে দেশের খাদ্যজাত পণ্য, ঔষধ প্রভৃতি শিল্প উপকৃত হবে। উপকৃত হবে ভোক্তাশ্রেণীও।
দুটি প্রস্তাবে ছাপাখানার জন্য মূসক পরিশোধ সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনা, সংবাদপত্র এবং পাঠক সমাজ উপকৃত হবে।
মূসক বিষয়ক একটি প্রস্তাবে মূসক অপরিশোধিত পণ্য এবং রপ্তাণিযোগ্য পণ্য ওয়্যারহাউজে রাখার সুযোগ সৃষ্টি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যবসায় সহজতর হবে।
আয়কর সম্পর্কিত পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে একটিতে নিবন্ধিত শিল্পের, বিশেষতঃ এসএমই শিল্পের, কাঁচামাল আমদানির উপর থেকে অগ্রিম মূসকের ন্যায় অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে শিল্পের মুলধনী ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উৎপন্ন পণ্য ভোক্তার জন্য কিছুটা হলেও সহজলভ্য হবে।
আয়কর সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং শিল্পের উপর থেকে আয়কর প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে রিসাইক্লিং উৎসাহিত হবে এবং পরিবেশের উন্নয়ন হবে।
আয়কর সম্পর্কিত অপর একটি প্রস্তাব নতুন এসএমই উদ্যোক্তাদের আয়কর অবকাশ সংক্রান্ত। এর ফলে এইসব ছোট ছোট শিল্প নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় ও সুযোগ পাবে।
রপ্তাণিমূল্যের উপর অগ্রিম আয়কর হারের মধ্যে পার্থক্য নিরসন করে একটি সমন্বিত হার নিরুপণের জন্য একটা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি গৃহীত হলে সকল রপ্তাণিকারকের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আয়কর সংক্রান্ত শেষ প্রস্তাবটি হলো সকল রপ্তাণিকারক শিল্পের জন্য কর্পোরেট করহার হ্রাসের প্রস্তাব। এটিও আয়কর হারের মধ্যে পার্থক্য নিরসন করে একটি সমন্বিত হার নিরুপণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি গৃহীত হলে সকল রপ্তাণিকারকের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সকলের জন্য একটি সুষম হার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের বিবৃতিতে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম জানান, এসএমই থেকে গড়ে প্রতি অর্থবছরে ৩৫-৫০ টি প্রস্তাবনা পেশ করা হয় যার মধ্যে ৫-১০ টি অনুমোদন পায়।
এবারের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনার মধ্যে সকল রপ্তানিকারক শিল্পের জন্য কর্পোরেট করহার হ্রাসের প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৫% হারে প্রযোজ্য এবং তৈরী পোশাক রপ্তানির উপর এই হার ১৫ শতাংশ।
উদ্যোক্তা বার্তার এক প্রশ্নের আলোকে শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, সকল রপ্তানিকারক শিল্পের জন্য কর্পোরেট ট্যাক্স সর্বোচ্চ ১৫% হারে ধার্য্য করার জোর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন, এগুলো সব একই ধরণের শ্রমঘন শিল্প। যদি এই সুবিধা কার্যকর হয় তবে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধানে এটি সহায়ক হবে। ক্ষুদ্র-মাঝারি বা বড় সব শিল্পে বেশি শ্রমশক্তি যুক্ত হবে ফলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে।
এছাড়াও এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, এসএমই এর কার্যক্রম পরিচালনায় একটি বড় বাঁধা হলো এর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। তিনি আরো উল্লেখ করেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের কাজের যথাযথ স্বচ্ছতা বিদ্যমান। এখানে ফান্ড এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের সমন্বয় ভালো। ফলে এসএমই খাতে যদি পর্যাপ্ত ফান্ড প্রাপ্তি হয় তবে মাঠ পর্যায় বেশি উপকৃত হবে। সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে মোট ৩৪ টি প্রস্তাবনা ছাড়াও নগদ প্রনোদনা এবং বিবিধ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য আরও কিছু প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। সে প্রস্তাবগুলি ট্যারিফ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বিবেচনার জন্য।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা