দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে চলতি মৌসুমে চার মাসে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা।
ফুলচাষি ও বিপণনে জড়িত ব্যবসায়ীরা জানান, ফুলচাষে এ বছর লাভের আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু, নভেম্বর ও চলতি মাসজুড়ে লাগাতার অবরোধ ও হরতালের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করতে তাদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।
ফুলচাষি আরশাদ আলী জানান, ‘এ বছর যশোর জেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ছয় হাজার কৃষক ফুল চাষ করেছেন। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৫ শতাংশ যশোর থেকে পূরণ করা হয়। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গদখালিতে ফুলের চাহিদা ও বিক্রি বাড়ে।’
বিজয় দিবস, বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান ঘিরে বিপুল পরিমাণ ফুল বিক্রি করেন গদখালির ফুলচাষিরা। এতে তাদের বেশ ভালো অঙ্কের আয়ও হয়।
বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তত তিন কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন গদখালির ফুলচাষিরা।
গদখালির পাইকারি ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস তিন থেকে চার টাকা, গোলাপ চার তেকে পাঁচ টাকা, গাদা প্রতি হাজার ৪০০-৫০০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি পিস তিন থেকে চার টাকা, ঝাউ প্রতি পিস মানভেদে ৫০-১০০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ১০-১২ টাকা দরে।
ভালো দাম পাওয়ায় ফুল বিক্রি করে সন্তুষ্ট চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে পর্যাপ্ত ফুল সরবরাহ করতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও বাগানের কর্মচারীরা।
ফুলচাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ বছর গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা ও গাদা ফুলের চাষ করেছি। চাষের পরিমাণ কম হলেও ভালো দাম পাওয়া যাবে। তবে হরতাল-অবরোধে দ্বিগুণ গাড়িভাড়া দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে লাভের পরিমাণটা কমে গেছে।’
ফুলচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা ও জারবেরা চাষ করেছি। রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের জন্য এখন বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে ভালো দাম পেলেও শঙ্কায় আছি। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা জাতীয় দিবসগুলোতে ক্রেতা পর্যায়ে ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। প্রতি বছরই নানা কারণে চাষিরা দাম পায় না। সেজন্য এ বছর চাষিরা স্বল্প পরিমাণে ফুলের চাষ করেছে।’
ফুলচাষি জসিম উদ্দিন জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলতি বছর গদখালির ফুলচাষিরা রেকর্ড পরিমাণ টাকার ফুল বিক্রি ও বাজারজাত করতে পারবেন।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ফুল বাইরের জেলাগুলোতে পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি ফুল মৌসুমের চার মাসে গদখালি থেকে অন্তত ৬০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদী আমরা।’
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা।