আপনার বয়স কত? কতবার হাল ছেড়ে দিয়েছেন এই মনে করে যে অনেক দেরী হয়ে গেছে?
চিন্তা করতেই পারেন ৮৯ বছর বয়সে একজন মানুষ বিশ্রাম নেয়া কিংবা মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারেনা। এই বয়সে শরীরে না থাকে কোন শারীরিক শক্তি না থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ৮৯ বছর বয়সী লতিকা চক্রবর্তী এইসব ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন কারো সত্যিই কিছু করার ইচ্ছাশক্তি থাকে তবে তা সে করতে পারবেই।এই বয়সে এসে তিনি তার তৈরি ব্যাগ বিক্রি করার জন্য একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছেন, ব্যবসার নাম দিয়েছেন লতিকা’স ব্যাগ (Latika’s Bag)।
আসামে জন্মগ্রহণকারী লতিকার বিয়ে হয় ভারতের সার্ভে অফিসের জরিপ কর্মকর্তা কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তীর সাথে।জরিপের কাজে তাকে আর লতিকাকে সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হত।
লতিকার শখছিল সারা দেশ থেকে সুন্দর শাড়িও কাপড় সংগ্রহ করার।ব্যবহারের পর সেগুলো থেকেই তিনি জামা, সোয়েটার, পুতুল এবং ব্যাগ তৈরি করতেন।
ছোটকাল থেকেই বুনন, সেলাই এর প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল লতিকার। সে সময়ে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের জন্য কাপড় ঘরেই তৈরি করতেন। লতিকাও তার বাচ্চাদের জন্য তা করতেন আর যখন তার বাচ্চারা বড় হয়েগেল তখন তিনি পুতুল বানাতেন। ৪-৫ বছর আগে তার পুত্রবধূ জামার সাথে ম্যাচ করে একটা হ্যান্ডব্যাগ তৈরী করে দিতে বললেন শ্বাশুড়িমাকে। ঠিক তখনি লতিকা বুঝতে পারলেন তার হ্যান্ডব্যাগ তৈরির প্রতিভার কথা।
সেই দিন থেকে লতিকা আরও ব্যাগ বানানো শুরু করলেন। বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের লোকজনও তা খেয়াল করতে লাগলো। সেই ব্যাগগুলো জন্মদিন কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে গিফট দিতে থাকলেন। এর মধ্যেই তার নাতী জার্মানি থেকে ফিরল আর এসেই দেখল দাদী সুন্দর সুন্দর ব্যাগ তৈরী করছেন দাদীর এই কাজ দেখে অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য ওয়েবসাইট খুলে দিলো।
লতিকা পুরাতন জামা কিংবা শাড়ির দিকে তাকিয়ে কল্পনা করেন এর এককালের সৌন্দর্যের কথা। হয়তো এটা পরা হয়েছিল কোন বিয়েতে অথবা কোন উৎসবে। তিনি যা বানান তা এর অতীতকে প্রতিফলিত করে। প্রতিটা ব্যাগ এর আছে একটা অনন্য অসাধারণ গল্প।
লতিকা চক্রবর্তী মনে করেন তিনি একটা ব্যাগ বানিয়ে একটা পুরাতন কাপড়কে নতুন জীবন দেন।
লতিকার কাজের কোনো বাধাধরা সময় নেই। যখন তিনি ব্যাগটাকে কিভাবে বানাবেন তা ঠিক করে ফেলেন, তখনই তা বানান।
লতিকা চক্রবর্তী তার কাজের সাথে থাকা প্রতিটা বস্তুকে খুব ভালোবাসেন। তিনি আজ অবধি তার স্বামী কৃষ্ণ লাল চক্রবর্তীর দেয়া সেলাই মেশিনটা ব্যবহার করেন যার বয়স ৬৪ বছর। লতিকা তার স্বামীকে হারান ৩৮ বছর আগে। প্রতিমুহূর্তে লতিকা মেশিনটির দিকে তাকিয়ে তার স্বামীকে মনে করেন।
লতিকা তার বয়স তুচ্ছ করে কাজ করছেন। আপনার অজুহাত কি?
তথ্যসূত্র ও ছবিঃ এশিয়া টাইমস
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা