গবাদি পশু পালনে সাফল্যের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে রাজশাহী। গো-খাদ্যের বাজার চড়া থাকায় গবাদি পশু লালন-পালন করার খরচ বাড়ার পাশাপাশি গরম আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জসহ নানান প্রতিকূলতার পরও গবাদি পশু পালনে রাজশাহী সফলতা দেখিয়েছে।
দেশের মধ্যে কোরবানির জন্য এবার সবচেয়ে বেশি ছাগল আছে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে। এছাড়া চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে কোরবানির গরুও। সব মিলে যে পরিমাণ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে, তা দিয়ে রাজশাহীর কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভারত থেকে এবারও গরু আমদানি করার প্রয়োজন নেই।
টানা দুই বছর করোনা মহামারি কাটিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চান এই অঞ্চলের খামারিরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে তাই এবার পর্যাপ্ত পশু লালন-পালন করেছেন। ক্ষতিকর কোনো পদ্ধতি ছাড়াই প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শে দেশি উপায়ে কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে, নানান চ্যালেঞ্জ থাকার পরও রাজশাহী পশু পালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে নীরবেই। এই অবস্থা করোনার দুই বছর আগেও ছিল না। এটি রাজশাহীর একটি অনন্য সাফল্য। বর্তমানে দেশের মধ্যে কোরবানির জন্য সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে রাজশাহীতে। এছাড়া কোরবানির জন্য চাহিদার চেয়েও গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
তাদের তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় এক লাখ ৩০ হাজার ২৬৫ জন খামারি রয়েছেন। জেলাগুলো হচ্ছে- রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট। বর্তমানে এসব জেলার খামারিদের কাছে কোরবানির জন্য ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬৩৯টি ছাগল রয়েছে। ভেড়া রয়েছে চার লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭টি। ছাগলের মতো ভেড়ার সংখ্যাও বেশি। আর গরু রয়েছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯টি, মহিষ ২১ হাজার ৫২১টি।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে, কোরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২টি। জেলায় এবার সম্ভাব্য চাহিদা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি রয়েছে। রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারি রয়েছেন। তাদের কাছে কোরবানির জন্য ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫টি ভেড়া আছে। এছাড়া মহিষ রয়েছে ৩ হাজার ২১১টি।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2022/06/oishe-middle-1-2.jpg)
ধারণা করা হচ্ছে, জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে রাজশাহী জেলার হাটগুলোতে কোরবানির পশু আসতে শুরু করবে। জুলাইয়ের প্রথমেই কোরবানির হাট জমজমাট হয়ে উঠবে।
রাজশাহীর মহানগরীর ‘সিটিহাট’ছাড়াও উপকণ্ঠে থাকা পবার নওহাটা, দামকুড়া ও কাঁটাখালীতে হাট রয়েছে। এছাড়া জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাট, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট ও মহিষালবাড়ি হাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর হাট, দুর্গাপুর হাট, মোহনপুরের কেশরহাট ও সাবাইহাট, তানোরের চৌবাড়িয়া ও মুণ্ডুমালা হাট উল্লেখযোগ্য। সিটিহাট পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও পবা উপজেলা প্রশাসন। আর উপজেলার হাটগুলো জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা করে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, করোনা অতিমারীর কারণে গেল দুই বছর রাজশাহীর খামারিদের অনেক লোকসান হয়েছে, এরপরও তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। এ কারণে নানান সংকট মোকাবিলা করে কোরবানির জন্য পশু লালন-পালন করেছেন। দেশি গরু দিয়েই এবার কোরবানির চাহিদা পূরণ সম্ভব। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, করোনা না থাকায় এবার ভালো দাম পাবেন বলে খামারিরা আশা করছেন। নানা কারণে বাজার মন্দার আশঙ্কার বিষয়টাও সবাইকে ভাবাচ্ছে। এরপরও হাটে কেনাবেচা জমে উঠলে খামারিরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন। তবে গবাদি পশু লালন-পালনে খরচ বাড়ায় এবার কোরবানির পশুর দাম কিছুটা বেশি হবে।
ডেস্ক রিপোর্ট,
উদ্যোক্তা বার্তা