পদ্মা সেতু: পিরোজপুরের পেয়ারাচাষীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা

0

পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এবারের বর্ষা থেকেই বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারার নতুন সম্ভাবনা দেখছেন পিরোজপুরের পেয়ারাচাষী ও ব্যবসায়ীরা। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেতু।

এতদিন পদ্মায় সেতু না থাকায় ফেরী পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে পেয়ারাবাহী ট্রাকেই অনেক পেয়ারা পচে অখাদ্য হয়ে যেতো। এ কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে পিরোজপুরের পেয়ারা কেনাবেচা থেকে দূরে সরে গেছেন অনেক ব্যবসায়ী। ফলে পেয়ারার বাজারে ধ্বস নেমে হাজার-হাজার পেয়ারা চাষী বিপুল ক্ষতির সম্মূখীন হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

পদ্মা সেতু বাস্তব হওয়ায় পেয়ারা উৎপাদিত অঞ্চলগুলোতে এখন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। মধ্য আষাঢ়ে পেয়ারা পাকা শুরু করলে চাষীরা এবার পেয়ারার ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে আশা করছেন।

পিরোজপুরের পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া নিয়েও সম্ভাবনা দেখছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত শাক-সবজি, মাছ, মুরগী, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে।

তবে বেশি সম্ভাবনা পেয়ারাকে কেন্দ্র করে। পিরোজপুর অঞ্চলের পেয়ারার সুনাম রয়েছে দেশের সর্বত্র। দ্রুত পচনশীল কিন্তু স্বাদে-গন্ধে অদ্বিতীয় এ পেয়ারাটি শুধুমাত্র পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার একটি বিরাট এলাকা এবং সংলগ্ন ঝালকাঠীর কিছু এলাকায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে।

স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার জানান, ‘শুধু পেয়ারা চাষীরাই নয়, পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই এ বছর থেকে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবেন। এ অঞ্চলের এই সুমিষ্ট পেয়ারা ছড়িয়ে পড়বে দেশের বড়-বড় শহর বন্দর অঞ্চলে। বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারা উৎপাদনের এ উপজেলার নামও সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।’

স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আদাবাড়ি গ্রামের নিত্যানন্দ সমাদ্দার বলেন: পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের অনেক পরিশ্রমে উৎপাদিত এ ফল বাগান থেকে বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারবো।

স্বরূপকাঠীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোশারফ হোসেন আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের ফলমূল, শাক-সবজি চাষীদের এবং ব্যবসায়ীদের জীবনে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।’

স্বরূপকাঠী উপজেলা কৃষি অফিসার চপল কৃষ্ণ নাথ জানান, এ অঞ্চলে ৬৫০ হেক্টরে চাষ করা ৬ হাজার ৫০০ টন সুস্বাদু পেয়ারা এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে এবং পেয়ারা চাষীরা লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখতে পারবেন।

তিনি বলেন, স্বরূপকাঠী অঞ্চলে স্বাদ ও গন্ধের আরো একটি কৃষিপণ্য হচ্ছে ঘৃতকাঞ্চন জাতের বোম্বাই মরিচ। ৭০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে ৪০০ টন বোম্বাই মরিচ উৎপাদিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা না আসায় মরিচ চাষীরা নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। এখন থেকে বোম্বাই মরিচ চাষীরাও অনেক লাভবান হবেন।

পিরোজপুরের সুস্বাদু আমড়ার ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে স্বরূপকাঠী ও কাউখালী উপজেলায়। স্বরূপকাঠীর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, শুধুমাত্র স্বরূপকাঠীতেই ১৬০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ২০০ টন আমড়ার উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন থেকে পচনশীল এ ফলটিও সরাসরি পদ্মা সেতু পেরিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আমড়া চাষীরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here