চুইঝাল দক্ষিণ অঞ্চলের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী একটি মসলা। কিন্তু কিছুদিন আগেও পর্যাপ্ত প্রচার-প্রসারের অভাবে এ মসলা জাতীয় ফসলটি বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিলো। নিজ জেলার সম্ভাবনাময় উইনিক এই পণ্যকে ই-কমার্সের মাধ্যমে সবার সামনে উপস্থাপন করে এবং সেই সাথে চুইঝাল নিয়ে সর্বোচ্চ রিসার্স করার উদ্দেশ্যে কাজ করছেন উদ্যোক্তা শেখ মামুন।
কখনো কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেননি। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। পোশাক বিক্রির ছোট্ট একটা পেজও খুলেছিলেন। কিন্তু খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। শুরুতেই সম্পূর্ণ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যান। উই গ্রুপে রাজিব আহমেদ স্যারের দিক নির্দেশনা ফলো করে আবার নতুন উদ্যোমে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন।
তিনজন ক্রেতার কাছে মাত্র ৯০০ টাকার চুইঝাল বিক্রি করে তার পথচলা শুরু। শুরুতে শুধু কাঁচা চুইঝাল বিক্রি করতেন এখন চুইঝালের তিনটি সাইজের এবং বিভিন্ন জাতের কাঁচা ও শুকনা চুইঝাল, চুইঝালের আচার, চুইঝালের চারা, চুইঝালের কাটিং এবং শুকনা গুড়া পাউডার বিক্রি করছেন।
আপাতত বাড়ি থেকেই কাজ সামলাচ্ছেন। কোনো ফ্যাক্টরী বা কারখানা না থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা আছে। এখন সব মিলিয়ে ৭/৮ জন মানুষ তার সকল কাজ করে। অনলাইনে উদ্যোক্তার পেজের নাম ‘দেশী চুইঝাল’। দেশী চুইঝাল নামে একটি পাবলিক গ্রুপও আছে তার এবং দেশী চুইঝাল.কম ওয়েব সাইডের কাজ চলমান রয়েছে।
বিদেশে সরাসরি রপ্তানি না করলেও অনেকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে গেছে তার পণ্য। আগামী মাসে তিনি নিজে সরাসরি কলকাতায় পণ্য পাঠাবেন। এছাড়াও দেশের মধ্যে ৬৪ জেলার অধিকাংশ থানা শহরে এমনকি গ্রামেও তার পণ্য যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে চুইঝাল বিক্রি করেন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ কেজি এবং আচার বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৫০ কেজি। এর পাশাপাশি চুইঝালের চারা ও কাটিং বিক্রি করেন। মাসে গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
মোঃ মোখলেছ শেখ ও হোসনেয়ারা বেগম দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান উদ্যোক্তা শেখ মামুন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায়। এখানেই বড় হয়েছেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। দাখিল পরীক্ষা শেষে ভর্তি হয়েছিলেন শেখ হাসিনা কারিগরী মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে খুলনা সরকারি সুন্দরবন কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এবং তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে চতুর্থ বর্ষের ফরম পূরণ করেননি।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা শেখ মামুন বলেন, ‘ভবিষ্যতে পরিকল্পনা রয়েছে চুইঝালকে বিদেশের মাটিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রসেস করা এবং চুইঝালের চারা উৎপাদনের একটি নার্সারি এবং বিএসটিআই অনুমোদন পেলে চুইঝালের আচারের কারখানা স্থাপন করা। সেই সাথে অনেককে চুইঝাল নিয়ে কাজ করতে সহযোগীতা করা। নিজের পণ্য নিয়ে রিসার্স করে এবং পণ্যের মান ঠিক রেখে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে চাই।’
সাইদ হাফিজ, উদ্যোক্তা বার্তা