সমবয়সী একজন মানুষ যখন ফারহানা ইয়াসমিন লিলি ও তার মেয়ের দায়িত্ব দিব্যি পালন করে যাচ্ছিলেন তখন নিজের কাছে ভীষণ লজ্জা বোধ হচ্ছিল লিলির। মনে হচ্ছিলো, ‘আমি কি করছি? মেয়ে কি শিখবে আমাকে দেখে? অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়াই কি মেয়েদের জীবন?’
একপ্রকার হতাশা থেকেই শুরু। উদ্যোগের শুরুতে ভাবনা ছিল, ‘কী নিয়ে কাজ করবো? কী পারি আমি?’ কেনো জানি তার মনে হলো, ‘আমি জুয়েলারি তৈরি করতে পারি। এতে আমার নিজস্বতা থাকবে’।
২০২০ সালের ৭ আগস্ট মাত্র ৪৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু। এক রাতে বানালেন সিল্কথ্রেড এক জোড়া চুড়ি ও এক জোড়া কানের দুল। তারপর একটা পেইজ খুললেন যার নাম দিলেন ‘সাজুনি বুড়ি’। নিজের হাতে তৈরি পণ্যের ছবি পেইজে আপলোড দিলেন। পণ্যগুলো খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে গেলো। সেই বিক্রয়ের যাত্রা এখনো বহমান।
যেহেতু তিনি কাজ করছেন কাস্টমাইজড জুয়েলারি নিয়ে সেজন্য কাস্টমার শুধু ড্রেসের ছবি দিয়েই নিশ্চিন্ত থাকেন। কোন কালার কোন ডিজাইন বানাবো এটা তার উপর ছেড়ে দেন। এছাড়া উদ্যোগের সাথে আরও আছে দেশী শাড়ি। ক্রেতার ডিমান্ড-এর জন্য পরবর্তীতে তা সংযোজন করেন। তার ৯০ ভাগ পণ্য অনলাইনে বিক্রি হয়। অফলাইনে ২জন কর্মী আছে যারা তার উদ্যোগে তাকে সহায়তা করেন।
গায়ে হলুদের জন্য ফ্লোরাল জুয়েলারির কাজ তার পছন্দের একটি কাজ। তার বানানো ফ্লোরাল জুয়েলারি গিয়েছিল ইংল্যান্ড-এ। এছাড়া দেশের মধ্যে জামালপুর, শেরপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, গাজীপুর, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ আরও ৩৫টি জেলায় যাত্রা করেছে ‘সাজুনি বুড়ি’।
মাসে প্রায় ১৫-২০ সেট জুয়েলারি বানানো হয় তার।এর মাঝে ৩/৪টা ডিজাইন উঠানো হলে তা একাধিক বার বানানো হয়। তার বানানো প্রত্যেকটি ডিজাইন একাধিকবার বানানো হয় ক্রেতার কাস্টমাইজ চাহিদা অনুযায়ী। ফলে মাসে তারতম্য ভেদে ২০-৫০ হাজার টাকার প্রোডাক্ট তৈরি করেন।
উদ্যোক্তা বার্তায় সাথে নিবিড় আলাপে উদ্যোক্তা লিলি নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হবো এমন ভাবনা আমার ছিলো না। ভাবনা ছিলো কিছু না কিছু করতেই হবে। নিজে উপার্জন করতে হবে। জুয়েলারি মেকিং প্রফেশন বেছে নেয়ার কারণ হচ্ছে নারী মাত্রই সাজগোজ পছন্দ করে। সে হিসেবে পৃথিবী যতদিন ততদিন নারী এবং জুয়েলারি থাকবেই। সে ভাবনা থেকেই কাজটি নির্বাচন করা। আমি চাই এই সেক্টরে আরও উদ্যোক্তা আসুক। নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ করুক।’
উদ্যোক্তা ফারহানা ইয়াসমিন লিলির বাবা একজন সরকারি কর্মচারী এবং মা একজন গৃহিনী। বাবা-মা’র তৃতীয় এবং ছোট সন্তান। গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার নকলা থানার নারায়ণ খোলা গ্রামে। বাবার চাকুরি সূত্রে শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে জামালপুর জেলায়। বর্তমানে খুলনা পাইওনিয়ার মহিলা কলেজে পড়াশোনা করছেন।
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা