জামদানি দিয়ে কাকলি’র বিশ্বমাত

0
উদ্যোক্তা কাকলি তালুকদার

জামদানি নিয়ে কাজ করাই উদ্যোক্তা কাকলি তালুকদারের মূল উদ্দেশ্য ছিল। সঠিক জামদানিটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।

ইতোমধ্যে দেশের প্রত্যেকটি জেলাসহ বিশ্বের ১৮টি দেশে জামদানি দিয়ে মাত করেছেন কাকলির ‘‘কাকলি’স অ্যাটায়ার’’।

সবাই জামদানি নিয়ে সঠিক তথ্য জানবে কারণ জামদানি নিয়ে এখনও অনেকের মাঝে ভুল ধারণা রয়েছে। তাই একটি উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারন মানুষের মধ্যে জামদানি সম্পর্কে জানানোর জন্য গড়ে তোলাই ছিল কাকলি’স অ্যাটায়ারের উদ্দেশ্য।

এছাড়া জামদানি যেহেতু নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতে তৈরি হয়ে থাকে তাই দেশের সব জেলার মানুষ দেখে জামদানি কেনার সুযোগ পায়না এবং এমন অনেক জেলা আছে যেখানে জামদানির কোন আলাদা শো-রুম নেই এবং সেভাবে প্রচারও নেই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কাকলি’স এট্যায়ার কাজ করে যাচ্ছে যেন ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে জামদানি কেনাকাটা করতে পারেন। ক্রেতার কাছে তার পছন্দের সঠিক জামদানিটি পৌঁছে দেয়াই উদ্যোক্তার লক্ষ্য। ২০১৯ সালের জুন মাসের ১৩ তারিখে উদ্যোক্তা কাকলির উদ্যোগ কাকলি’স অ্যাটায়ারের যাত্রা শুরু হয় হয়।

জামদানি নিয়ে তার ছোট বেলা থেকেই আগ্রহ ছিল। কারণ ছোট বেলায় মায়ের আলমারিতে সাজানো জামদানিগুলো দেখতে দেখতেই বড় হয়েছেন। এবং যার ফলে প্রতিনিয়ত জামদানি নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়। তার ফলশ্রুতিতে কলেজ এবং ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একটানা প্রায় সাত বছর জামদানি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছেন এবং সুযোগ পেলেই চলে গিয়েছেন জামদানি পল্লিতে জামদানির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার জন্য। এক সময় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বাচ্চা হওয়ার পরে তা ছেড়ে দিতে হয়। তাই চিন্তা করেছেন ঘরে বসে কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায় কিভাবে। এই চিন্তাধারা থেকেই অনলাইনে ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় আসে।

যেহেতু দেশীয় শাড়ি নিয়ে তার অভিজ্ঞতা ছিল তাই দেশীয় বিভিন্ন শাড়ি নিয়েই কাজ শুরু করেন। তার ঠিক দুইমাস পর ২০১৯ এর ২৪ আগস্টে তিনি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম উইতে জয়েন করেন এবং যেখানে ছিল দেশি পণ্যকে কিভাবে ই-কমার্সের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যায় এনিয়ে বিভিন্ন আলোচনা। যেটা দেখেই তিনি উইতে সময় দেয়া শুরু করেন কারণ তিনি নিজে একজন দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তা এবং তিনি চাইতেন আমাদের দেশে তৈরি পণ্য সর্বত্র ছড়িয়ে পরুক। উদ্যোক্তা মনে করেন তার ভাগ্য ভালো কারণ সেখানে তিনি ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদকে পেয়ে যান।

যা ছিল তার উদ্যোগের জন্য আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট। প্রথমদিকে তার উদ্যোগে জামদানিসহ আরও কিছু পণ্য থাকলেও পরে রাজীব আহমেদের পরামর্শে তিনি শুধু জামদানি নিয়ে কাজ শুরু করেন।

উদ্যোক্তা কাকলি তালুকদার বলছিলেন, সেই থেকে এখন অব্দি প্রতিনিয়ত রাজীব আহমেদ উদ্যোক্তাদের কে গাইড করে যাচ্ছেন কিভাবে উদ্যোক্তা তার উদ্যোগের মাধ্যমে জামদানিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। উনার প্রতিটি পরামর্শ দেশীয় পণ্যের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ যার ফলাফল উদ্যোক্তা দেখতে পেয়েছেন এমন একটা সময় যখন বৈশ্বিক মহামারি চলছিল। দেশীয় পণ্যগুলো ছিল তখন অর্থনীতির চাকা সচল রাখার একমাত্র মাধ্যম। তার উদ্যোগের মূল পণ্য জামদানি শাড়ি। সেই সাথে আমি জামদানি থ্রি-পিস, টু-পিস, পাঞ্জাবী এবং জামদানি মটিফের শাল নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া জামদানি নিয়ে তার কিছু ফিউশন ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জামদানি গাউন এবং জামদানি কুশন কভার।

একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আড়াই বছর অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। উদ্যোক্তার লেখায় তেমন লাইক-কমেন্ট ছিল না এবং নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পেইজ বা গ্রুপেও তেমন কোন রেসপন্স ছিল না। তবে তিনি যখন উই গ্রুপে জয়েন করেন তার পর থেকে প্রতিনিয়ত জামদানি নিয়ে লিখতেন এবং আস্তে আস্তে তা সবার নজর কাড়তে শুরু করে এবং তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। আর একজন অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে উদ্যোক্তা মনে করেন সমস্যা সব সময় থাকবে সেটাকে কতটুকু ইতিবাচক মানসিকতার সাথে মোকাবেলা করা যায় তা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হতাশ হয়ে পেছনে চলে আসা কখনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না। উদ্যোক্তার সাথে আরও তিন-চারজন কর্মী কাজ করছেন। যারা কন্টেন্ট রাইটিং, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি বিষয়গুলো দেখছেন।

কাকলি’স অ্যাটায়ারের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলাসহ বিশ্বের ১৮ টি দেশে জামদানি পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আগামীতে কিভাবে এই সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এটা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেক নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেন এবং আশা করেন তা ফলপ্রসূ হবে।

উদ্যোক্তা জানান উদ্যোক্তার মা এবং স্বামীর উৎসাহে তিনি তার উদ্যোগ শুরু করেন।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য তার পরামর্শ হলো: আমাদের দেশের জামদানি, মসলিন আমাদের অহংকার। নতুন প্রজন্ম যদি এগুলো নিয়ে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্ব বাজারে দেশীয় পণ্যের বিস্তার হবে।

মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here