উদ্যোক্তা মোঃ রবিউল আওয়াল মাহিন একজন পরিশ্রমী এবং সফল মানুষ যিনি নিজেই তার নিজের অনুপ্রেরণা। একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এই রবিউল।
তার এই ব্যতিক্রম লিঙ্গের কথাটা তিনি প্রথমে সবাইকে জানান না। নিজের ভিতরেই রাখেন তিনি। প্রথম পর্যায়ে তিনি চাকরি খুঁজে ছিলেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। চাকুরী না পাওয়ায় এক পর্যায়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। জীবনে তিনি কিছু একটা করতে চান, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। হতাশার একপর্যায়ে চিন্তা করলেন তিনি উদ্যোক্তা হবেন। এভাবেই তার উদ্যোক্তা জীবনের পথচলা শুরু।
তার এই উদ্যোক্তা জীবনের পথচলার অনুপ্রেরণা কেউ তাকে দেয়নি। তিনি নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। নিজের জীবনকে নিজের চালাতে হবে। বাবা-মা সবাই থাকার সত্ত্বেও পৃথিবীতে তিনি একজন একা মানুষ, তিনি উপলব্ধি করলেন। নিজের চলার রাস্তা তিনি নিজেই খুঁজে বের করলেন। পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে চলেন নিজ উদ্যোগে। তিনি চান জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করতে।
বর্তমানে উদ্যোক্তা রবিউল আউয়াল মাহিন কাজ করছেন হস্তশিল্প, কারুশিল্প, ডোরবেল আইটেম, একতারা, হাতে তৈরি শাল, শো-পিস ইত্যাদি নিয়ে।
শুধু তাই নয় বর্তমানে এই উদ্যোক্তা নিজেই উপার্জন করে পড়াশোনাও করছেন। বর্তমানে তিনি এলএলবিতে অনার্স করছেন। তার এই উদ্যোক্তা জীবনের পথচলাটা খুব একটা সুখকর ছিল না। প্রথমদিকে, সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা তিনি ফেইস করেছেন, প্রত্যেকটা মানুষ ভিন্ন নজরে দেখতো। সবাই তাকে ভালো ভাবে নিতে পারতোনা। মনে করত একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এইটাই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। এতো কিছুর পরেও, অদম্য মনোবল আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
পথচলায় সবচেয়ে বেশি যে মানুষটা সহযোগিতা করেছে তিনি হচ্ছেন ঢাকা মেরুল বাড্ডার হীরা নওশের যার সাথে তার রক্তের সম্পর্ক নেই। তারপরও তিনি তাকে বড় বোনের মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজকে তার হাত ধরে, তার বুদ্ধিতে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে সফল হয়েছেন। হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
উদ্যোক্তা জানান, “আমার মায়ের দেওয়া হাতের একটা আংটি ছিল যেটা ৫০০০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে আমার উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম পথ চলা শুরু।” বর্তমানে এই উদ্যোক্তা ২১জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিয়ে তার কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সফলতার সাথে। যাদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার খরচ সমস্ত কিছু তিনি পরিচালনা করেন। তাদের কাছে তিনিই তাদের মা, তাদের বাবা। যারা আগে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা তুলে বেড়াতো, পাড়ায় পাড়ায় ঢোল নিয়ে নাচ গান করত কিন্তু আজকে তারা এগুলো বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা রবিউল আউয়ালের ডাকে সাড়া দিয়ে কাজে এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে এসব তৃতীয় লিঙের মানুষরা তাদের কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও করছে। তাদেরকে নিয়ে কাজ করে প্রডাক্ট উৎপন্ন করেন এবং বিভিন্ন মেলাতেও উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে উদ্যোক্তার প্রোডাক্ট এখন পরিচিতি পাচ্ছে সারা দেশের মানুষের কাছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা জানান, “মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকাই একজন মানুষের সবচেয়ে বড় সফলতা। তিনি জীবনে প্রতিটা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। যেন তারা হতাশ হয়ে না পড়ে।”
মার্জিয়া মৌ,
উদ্যোক্তা বার্তা