‘পিঠা’ বাঙালির লোকজ খাবারের অংশ হলেও সব মহলেই সমাদর রয়েছে। এক সময় তো উৎসব অনুষ্ঠান বলতে পিঠার কোনো বিকল্প ছিলো। যদিও আধুনিক সভ্যতায় আমরা পিঠার বেশকিছু বিকল্প পেয়েছি তবুও পিঠার আবেদন এতোটুকুও কমে যায়নি।
এই পিঠা নিয়েই কাজ করছেন উদ্যোক্তা তানজিন আহমেদ জুঁই। তার তৈরি পিঠা লন্ডন, দুবাই, দক্ষিণ কোরিয়ার ভোজন রসিকদের জন্য যাচ্ছে। পিঠাতেই তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন, ধরেছেন সংসারের হাল।
তানজিনের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানায়। ছোটবেলায় টুকটাক গ্রামে থাকা হলেও বাবার চাকুরি সূত্রে টংগী, গাজীপুরেই বেড়ে উঠা। ২০১৯ সালে তানজিনের বাবা মারাত্মক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারে আর কোনো উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব চলে আসে তার উপর। শুরু হয় সারাদিন-রাত টিউশনির মহাযজ্ঞ। টিউশনি শেষে ছুঁটে যেতেন হাসপাতালে। সেখানেও দৌঁড়-ঝাপ কম যেতো না।
তানজিন এখন স্নাতক ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন। গত বছর করোনায় যখন টিউশন সব বন্ধ হয়ে গেলো, দু’চোখে সরষের ফুল দেখতে লাগলেন তিনি। আয় বন্ধ হয়ে নাজেহাল অবস্থা। এমন সময় হঠাৎই একদিন উইতে জয়েন করলেন তিনি। নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করলেন হোমমেইড খাবারের তৈরির কাজ।
টিউশন করে জমানো ১২০০ টাকা দিয়ে উদ্যোগ শুরু করলেন। তার উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে নকশি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, ফ্রোজেন রুটি, সিরিঞ্জ পিঠা, পাপড়, খুদের ভাত ও ভর্তা, নাড়ু। এছাড়া রকমারি পিঠাপুলি। উদ্যোক্তার কোনো কর্মী নেই। তার মা সবসময় তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।
উদ্যোক্তা তানজিনের অনলাইন পেইজের নাম ‘তানজিন’স কিচেন’। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে লন্ডন, দুবাই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তার পিঠা পৌঁছে গিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩০টা জেলায় তার পিঠা পাঠিয়েছেন। মাসে পণ্য উৎপাদন আসলে অর্ডারের উপর নির্ভর করে। ইদের সময় এতো বেশি অর্ডার আসে যে পিঠা বানিয়ে শেষ করতে পারেন না। মাসে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার পণ্য উৎপাদন করেন তিনি। ইতোমধ্যে উইতে লাখপতি উদ্যোক্তার সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি।
বর্তমানে উদ্যোগের পাশাপাশি একটি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরি করছেন উদ্যোক্তা তানজিন। জব, টিউশন সামলিয়ে বিজনেসের কাজও করে যাচ্ছেন সমান তালে। জীবিকার তাগিদে সবকিছু একসাথে সামলে নিতে হচ্ছে।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে তানজিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘শখের বসে উদ্যোক্তা হওয়া। জিরো লাভের আশায় কাজ শুরু করেছিলাম।সেটাই যে পেশা-নেশা হয়ে যাবে তা আশা করিনি। এমনকি এটা যে আমার পরিবারের আর্থিক খুটি শক্ত করবে, ভাবতেই পারিনি। ভবিষ্যতে আমি আমার ব্যবসা অনেক বড় করতে চাই। আমি চাই আমার মতন হাজারো মেয়ে পরিবারের ছেলে হয়ে বেঁচে থাকুক।’
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা