‘বাঁশ বিলাস’-এ হিরনের সফলতা

0
উদ্যোক্তা- হিরন আহমেদ

একটি সৃজনশীল পছন্দ একটি অনন্য রুচির পরিচায়ক-এই ট্যাগলাইন সামনে রেখে বাঁশের বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের শতটিরও বেশি পণ্য তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন নওগাঁর হিরন।

নওগাঁর ধামোইরহাট থানার রাঙামাটি গ্রামে জন্ম হিরন আহমেদের। সেখানেই শৈশব-কৈশর এবং শিক্ষাজীবন কাটে তাঁর। বর্তমানে একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছেন তিনি। বরাবরই স্বাধীনচেতা হিরন। নিজ ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বোধ করেন সেইসাথে তিনি বেশ সংস্কৃতিমনাও। সংস্কৃতি, নাটক এগুলোর প্রতি প্রেম থেকে ‘নাট্যমিডিয়া’ নামে নিজ এলাকায় গড়েন প্রথম ডিজিটাল স্টুডিও। ভালোলাগার সে যায়গাটিকে মনের মতো সাজাতে সিদ্ধান্ত নিলেন বাঁশশিল্পে সাজাবেন পুরো স্টুডিও। সাল ছিল ২০১৪। সেসময় বাংলাদেশে ২জি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু ছিল।সেটাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগ পাতা, ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখতে থাকেন।এবং মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে নিজের গড়া সে স্টুডিও টিকে, কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের সহোযগিতায় মনের মতো করে সাজান। যা সেসময় আত্নীয়স্বজন, বন্ধুমহল, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে বেশ শাড়া ফেলে দিয়েছিল।সেখান থেকে বাঁশ শিল্পের প্রতি একটা ভালোলাগা জন্ম নেই তার।

কোন স্পৃহা বাঁশ শিল্পের প্রতি আপনার ঝোঁক এনে দিয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে হিরন আহমেদ উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘‘সংস্কৃতি, নাটকের প্রতি ভালোবাসার সূত্র ধরেই মূলত আমার বাঁশ শিল্প নিয়ে কাজ শুরু হয়।বর্তমানে যা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে কানাচে। মাকলা, ভালকা, যাওয়া, তল্লা, বাঁশলি ইত্যাদি হলো আমাদের নওগাঁবাসিদের স্হানীয় ভাষায়, বাঁশের বিভিন্ন প্রজাতির নাম। এলাকায় এই প্রজাতির বাঁশ গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকায় পণ্য তৈরি করতে বাইরের এলাকা থেকে খুব একটা বেশি বাঁশ সংগ্রহ করতে যেতে হতো না আমার। নাগালের মধ্যেই পেয়ে যেতাম। সবকিছু মিলিয়ে এভাবেই বাঁশ শিল্পের প্রতি ভালোলাগা, ভালোবাসা জন্মেছিল।’’

ইউটিউবে ঘুরে ঘুরে তিনি দেখেন ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপাইন ইতোমধ্যে বাঁশ শিল্প নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তিনি এই বিষয়গুলো দেখে অনুপ্রাণিত হন এবং এ বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নিজেই বিভিন্ন গবেষণা চালাতে থাকেন। নিজ এলাকায় বাঁশের পর্যাপ্ত ঝাঁড় থাকায় খুব একট ঝামেলা পোহাতে হয়নি তার।পড়াশোনা, গবেষণা সবমিলিয়ে যখন একটা ধারণা সৃষ্টি হলো তখন সিদ্ধান্ত নিলেন এটা নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে কাজ শুরু করবেন।বাংলাদেশও বাঁশ শিল্পের স্থান শক্ত করবেন এই পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৬ তে চায়না থেকে ৩০ হাজার পুঁজি নিয়ে মেশিন আনলেন।তারপরে টুকটাক কাজ করলেও বেশ কিছু বছর কেটে যায়।এর মধ্যে আরো পড়াশোনা করতে থাকেন বাঁশ শিল্প নিয়ে।

২০১৯ এ বাণিজ্যিক ভাবে বাঁশের পণ্য তৈরি শুরু করে। নিজ এলাকায় বাজারের উপর ২০ ফিট বাই ১০ ফিটের একটি কারখানা গড়েন হিরন আহমেদ। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন বাঁশ বিলাস। এ নামে সামাজিক যোগাযোগ পাতায় একটি পেজ ও চালু করেন তিনি।বর্তমানে তার ৫ জন সহোযোদ্ধা রয়েছেন। যাদের নিজ হাতে কাজ শিখিয়েছেন হিরন আহমেদ। মাত্র ৮০ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫০০ টাকার পণ্য রয়েছে বাঁশ বিলাসে। ৩০ হাজার পুঁজি আজ লাখ লাখ টাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

বাঁশ বিলাসের প্রথম পণ্য কি ছিল? এবং বর্তমানে কি-কি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে বাঁশ বিলাসে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ল্যাম্প তৈরির মধ্যে দিয়ে বাঁশ বিলাসের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন বাঁশ বিলাসে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শোপিস, বোতল, বাঁশের আলনা, ফুলের ঝুড়ি, হাতা-খুন্তি ইত্যাদি সহো ১০০ টির ও বেশি বাঁশ পণ্য আছে বাঁশ বিলাসে।

প্রতিনিয়ত আমরা ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন নতুন পণ্য তৈরি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা বাঁশের ফার্নিচার তৈরি করেও ব্যাপক শাড়া পেয়েছি। এছাড়াও বাঁশ শিল্পকে সারা দেশের আনাচে কানাচে ছড়াতে নতুন শাখা হিসেবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন যুক্ত করেছি।ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাতে ৩টি ইন্টেরিয়র ডিজাইন করেছি আমি। আরো বহুকাজ ইতোমধ্যে পেয়েছি যা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুরু করতে পারবো আশা রাখছি।’’

তরুণদের উদ্দেশ্যে হিরন আহমেদ বলেন ‘‘আপনারা যারা উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই যেটি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন সেটি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন, জানেন ভালোমতো বিষটি নিয়ে। সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে কাজ শুরু করুন দেখবেন সফলতা আসবেই।’’

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here