রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ তথা উত্তর অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হলো কালাই রুটি। রাজশাহীতে যাবেন আর কালাই রুটি খাবেন না তা হতে পারে না।
মাসকলাইয়ের ডালের আটা দিয়ে তৈরি ‘কালাই রুটি’ রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের প্রিয় খাবার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারাই রাজশাহীতে আসেন, তারা একবারের জন্য হলেও পরখ করে দেখেন এই রুটি। মরিচ, বেগুন ভর্তা কিংবা হাঁসের মাংস দিয়ে কালাই রুটি খেয়ে তারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।
দেশের কিংবা বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিরা রাজশাহী গিয়ে কালাই রুটির স্বাদ নেন। ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ রাজশাহী অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই ‘কালাই রুটি’ মন কেড়ে নেয় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের। রাজশাহী সফরে এসে তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এই কালাই রুটি খান। শুধু তাই নয়, কারিগরদের সহায়তা নিয়ে তিনি নিজেও একটি কালাই রুটি তৈরি করেন।
রাজশাহীর এই ‘কালাইরুটি’ বাঙালির পাতে তুলে দিতে চান উদ্যোক্তা সোনিয়া খাতুন। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী শহরের বারো রাস্তার মোড়ে গড়লেন হেঁশেল ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট।
সোনিয়া খাতুনের স্বপ্নের উদ্যোগ হেঁশেল। শুরু করেছিলেন অনলাইনে থ্রিপিস, শাড়ি, খেজুর গুড়, আমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রয় দিয়ে।এরপর কাজের পরিধি বৃদ্ধিতে ২১ ডিসেম্বর ২০২০ রাজশাহী শহরের বারো রাস্তার মোড়ে গড়লেন হেঁশেল ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট।
সোনিয়া খাতুন উত্তরবঙ্গের এই জনপ্রিয় খাবারটিকেই হেঁশেলের মেনুতে প্রথম সেট করলেন।
হেঁশেলে রয়েছে ‘হাঁসের মাংস, গরুর বট, গরুর কালা ভূনা, সিদ্ধ রুটি, বেগুন ভর্তা, ফুচকা, চটপটি, হালিম, বিভিন্ন ধরনের নুডলস, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পরোটা। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ও রয়েছে যেমন ভূনা খিচুরীর প্যাকেজে রয়েছে খিচুরী, কালাভুনা, বেগুন ভর্তা এবং আচার।
কালাই রুটির বিষয়ে গ্রাহকের সাড়া কেমন জানতে চাইলে সোনিয়া খাতুন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ সকলের কাছে এত অল্প সময়ে তারা হেঁসেল কে এতোটা আপন করে নিয়েছে। অসংখ্য ক্রেতা ইতোমধ্যে হেঁশেলের রিপিট কাস্টমারের তালিকায় ও যুক্ত হয়েছেন।’
মেনুতে কালাইরুটি সর্বপ্রথম যোগ করছেন কোন চিন্তা থেকে?এই প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তা সোনিয়া জানান, ‘‘সব সময় ভেবেছি দেশের জন্য কিছু করবো, এই অনুপ্রেরণা থেকে দেশীয় ঐতিহ্য কে সকলের সামনে তুলে ধরতে আমি দেশীয় খাবার নিয়ে কাজ শুরু করেছি।আর দেশীয় খাবারগুলোর মধ্যে আমাদের উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় খাবার এই কালাইরুটি। সকল খাবারের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় এই খাবারটি যেন সকলের মাঝে তুলে ধরতে পারি মূলত এই চিন্তা থেকেই খাদ্যতালিকায় শুরুতেই কালাইরুটি যুক্ত করেছি।’’
সোনিয়া খাতুনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে রাজশাহী শহরের ছোটবন গ্রাম এলাকায়। রাজশাহী কলেজে অর্থনীতি বিভাগ হতে শেষ করেছেন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর। এরপর রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ বছর শিক্ষকতা করেন সোনিয়া। এরপরেই করোনার ভয়াল আঘাতে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব বন্ধ হয়ে যায় তখন সোনিয়ার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি স্বামী রাসেল আহমেদের কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়।এমন পরিস্থিতিতে দুজনেই রাজশাহীতে ফিরে আসেন।এবং পরিবার এবং স্বামীর সহোযোগিতায় উদ্যোক্তা জীবনে পা বাড়ান সোনিয়া।
পুঁজি এবং কর্মীর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ চার লাখ পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম বর্তমানে তা ৮ লাখের কাছাকাছি। এবং আমার সাথে ৫ জন সহযোদ্ধা আছেন। হেঁশেলের সকল খাবার আমি এবং আমার স্বামী তৈরি করি। শুধুমাত্র কালাইরুটির জন্য একজন রান্নার লোক রেখেছি।’’
হেঁশেলে কালাইরুটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং খিচুরীর প্যাকেজ যেখানে থাকছে পাঁচটি আইটেম এর মূল্য ১৫০ টাকা যা এখন পর্যন্ত হেঁশের সর্বোচ্চ খাদ্যমূল্য। শুধু হেঁশেলে বসেই এর খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন তা নয় ‘হেঁশেল ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’- পেজে শহরের বিভিন্ন স্থান হতে ঘরে,অফিসে যেখানে খুশি সেখান থেকেই অর্ডার করলেই খাবার পৌঁছে যাবে ভোজনরসিকদের হাতে।
দেশের প্রতিটি বিভাগে হেঁশেলের শাখা স্থাপন করে কালাইরুটিসহ দেশীয় সব খাবার ছড়িয়ে দিতে চান ভোজনরসিকদের পাতে পাতে এমন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন উদ্যোক্তা সোনিয়া।
সফলতার জন্য পুঁজি কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তা বলেন, ‘সফলতার জন্য আমার কাছে পুঁজি নয় বরং পরিকল্পনা এবং ধৈর্য এ দুটো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল ভাই-বোনরা উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন তাদের বলবো আপনার পুঁজি নি অতিরিক্ত মাথা না ঘামিয়ে পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করুন এবং ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে যান তাহলে সফলতা আসবেই।’
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা