তরুণ উদ্যোক্তাদের কণ্ঠেও তারুণ্যের জয়গান

0

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে তারুণের জয়ধ্বনি শুনিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন আমাদের দেশপ্রেম, কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বাংলাদেশ একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারে স্থান নিবে।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে উদ্যোক্তা বার্তার পক্ষ থেকে একাধিক তরুণ উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়। তরুণ উদ্যোক্তা ফিশঢাকাডটকম’র স্বত্বাধিকারী আয়েশা সিদ্দিকা। যিনি রাজধানীবাসীর কাছে ‘মৎসকন্যা’ নামে পরিচিত।

একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমানে নিজের উদ্যোক্তা জীবনের স্বপ্নকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আয়েশা সিদ্দিকা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘‘আজকের আমার এই পজিশনের আসার পেছনে কিন্তু আমার স্বপ্ন, মেধা-মনন ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা জড়িত। যদি একটু পেছনে ফিরে তাকাই ২০০৯ সালে এমবিএ করতে ঢাকায় আসলেও এক মাসের মাথায় সিটি ব্যাংক এনএতে ট্রেড সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ হিসেবে আমার চাকরি হয়। পরে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস সাতেক পর এক্সিকিউটিভ এমবিএতে ভর্তি হই। এরমধ্যেই এমবিএর শেষদিকে ব্যাংক আলফালাহ’তে কনজ্যুমার ডিপার্টমেন্টে যোগদান করি। সেখানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় ব্যাংক ছেড়ে দিয়ে জাপানিজ ইয়োকোহামা লেবেল এবং প্রিন্টিং (বিডি) কোম্পানিতে যোগ দেই। এরপর দুইটি চাইনিজ কোম্পানিতেও কাজ করেছি। কিন্তু একজন স্বাধীনচেতা হিসেবে আমি সব সময়ই নিজে কিছু একটা করতে চেয়েছি। এই যে আমি আজ গণমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিচ্ছি, সেটাও কিন্তু আমি ২০১২ সালে চিন্তা করেছি। এখানে আমার স্বপ্ন, মেধা-মনন ফুটে উঠেছে। আর যদি উদ্ভাবনী শক্তির কথা বলি তাহলে বলব রাজধানীতে যখন কেউ অনলাইন মাছ বিক্রি করেনি, তখন আমিই সেটা শুরু করি। আমি যেহেতু খুলনার মেয়ে সেখানে মাছের চাষ হয়, সেখানে চিংড়ি গবেষণা ইনস্টিটিউট আসে, ছোটবেলার থেকেই মাছের সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা। মাছ যখন দেশের বাইরে এক্সপোর্ট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো অনেক ভালো মাছ থাকে। ওই মাছুগলো ঢাকায় সীমিত কিছু জায়গায় পাই। আমি চেয়েছি ভালো মাছ দেশের মানুষ আগে খাবে, পরে তা এক্সপোর্ট হবে।’’

উদ্যোক্তা আয়েশা সিদ্দিকা

আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘‘একজন উদ্যোক্তার তার উদ্যোগের সফলতা সম্পর্কে নিজের ভেতরে গভীর বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। কারণ তাঁকে পুরো সময়টায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। কখনো সমস্যাগুলো এত তীব্র হয়ে উঠবে, হার মেনে নিতে বা ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নিতে মন চাইবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁকে তুলে ধরবে তাঁর নিজের আইডিয়া সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস। এটিই একজন উদ্যোক্তার চালিকাশক্তি। তার স্বপ্ন।’’

আপনি নিজেও একজন তরুণ, আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে দেশের তরুণ সমাজের জন্য কী বার্তা দিতে চান? এ প্রশ্নে আয়শা বলেন, তারুণ্যের শক্তি কিন্তু সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি নিজেও তরুণ অবস্থাতেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বর্তমানে তরুণরা অনেক সম্ভাবনাময়, দক্ষ, তাদের চিন্তা শক্তি অসীম। অনেকেই নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তরুণদের এই সৃজনশীলতা আমরা ইতোমধ্যেই কাজে লাগিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা দক্ষ জনগোষ্ঠী ও তারুণ্যের মেধার মিশেলের সমন্বয় ঘটাতে পারলে এই তরুণরাই আমাদের একদিন উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যাবে।

আলিবাবাডটকম’র কর্ণধার জ্যাক মা বলেছিলেন, ‘‘আমরা ব্যর্থ হলে অন্য কেউ নিশ্চয়ই সফল হবে।’ আসলে একটা সমস্যা সমাধানের জন্য যে চ্যালেঞ্জটা রয়েছে, একটা সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোগ সেই চ্যালেঞ্জটাকে গ্রহণ করেই দাঁড়ায়, বড় হয়।’’

তাঁর কথার রেশ ধরেই সমাজ জীবনের বাস্তবিক সমস্যা সমাধানে একটি যুগোপযোগী উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘সেলফ প্রটেক্ট অ্যাপ’ নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছেন তরুণ প্রযুক্ত উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন। তিনি বর্তমানে উইনকি টেক নামক সফটওয়্যার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)।

তরুণ বয়সেই একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে আরও আটজন তরুণ । তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, কাজ আদায়ের ভূমিকাটা কী থাকে এমন প্রশ্নে সাদ্দাম হোসেন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘ভালোভাবে টিম পরিচালনার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে নিজের স্বপ্নগুলোকে তার সহকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমিও সেটাই করি।’

উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন

সাদ্দাম বলেন, ‘একটা স্টার্টআপের সফল হওয়ার পেছনে একটি ভালো বিজনেস মডেলও জরুরি। পাশাপাশি থাকতে হবে কঠিন পরিশ্রম। যার মাধ্যমে আমি সফলতা পেয়েছি।’

গত সাড়ে ৪ বছরে উইনকি টেকের রয়েছে বহুমাত্রিক অর্জন ও অ্যাওয়ার্ড। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২০, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্তৃক ২০১৭-২০১৮ স্বীকৃতি ও উদ্ভাবনী অনুদান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস কর্তৃক মেধাস্বত্ব হিসেবে কপিরাইট সনদ, একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই) আয়োজিত দেশসেরা ১০ জনের মধ্যে নির্বাচিত সম্মাননা। এছাড়া ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলাতে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের সম্মাননা অর্জন।

তরুণরাই আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র জানিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম বলেন, ‘‘ আমি তারুণ্যের মধ্যে দুর্বার স্পৃহা দেখি, দেখি অদম্য প্রাণশক্তি। একটি স্ফুলিঙ্গের মতো স্বপ্ন তারুণ্যকে উদ্দীপ্ত শিখায় পরিণত করতে পারে।’’

তরুণ সমাজই আগামীর বাংলাদেশের প্রধান নিয়ামক। যে তরুণরা উপহার দিয়েছে ১৯৪৮, ৫২, ৬৯, ৭১ এবং ৯০, সে তরুণদের উত্তরাধিকারীই আজকের তরুণ সমাজ। তারাই গড়ে তুলবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।

উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here