পাহাড়ি অঞ্চল রাঙামাটি। সেখানকার তিন বোন বিপ্লী চাকমা, প্রিয়াংকা চাকমা এবং সুচিন্তা চাকমা।
পড়াশোনা এবং চাকুরির সুবাদে সকলে এক পর্যায়ে ঢাকায় চলে আসেন। মেজ বোন প্রিয়াংকা চাকমা ভর্তি হোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা পছন্দ করতেন প্রিয়াংকা চাকমার পরিবারের রান্না করা পাহাড়ি খাবার।
প্রিয়াংকার সাথে তার বন্ধু-বান্ধবরা মাঝে-মাঝে এই মজাদার সকল খাবার খেতে চলে যেতেন বড় বোন বিপ্লী চাকমার বাসায়।
সেখানে যেয়ে বলতেন ‘দিদি আমাদের পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলে প্রিয়াংকা এবং আমরা সকলে যখন আলাদা হয়ে যাবো তখন এই মজাদার খাবার গুলো কোথায় পাবো, কোথায় যেয়ে খাবো?তখন থেকে প্রিয়াংকা চাকমার মনের এক কোনে সুপ্ত বাসনা সৃষ্টি হয়েছিল উদ্যোক্তা হওয়ার।
পড়াশোনা শেষ করে বিশ্বের বহুজাতিক একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ শুরু করেন প্রিয়াংকা চাকমা। এর পাশাপাশি চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার গুলো যাতে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন,তাদের ঐতিহ্য সকলের মাঝে তুলে ধরতে পারেন মূলত এই চিন্তা থেকেই প্রিয়াংকা চাকমা বড় বোন বিপ্লী চাকমা কে বললেন, পাহাড়ি খাবার নিয়ে কাজ শুরু করার কথা।কিন্তু বড় বোন যেহেতু চাকরি করতেন।তাই সংসার, কর্মস্থল সব সামলিয়ে এই কাজের প্রতি খুব একটা জোর দিয়ে সেসময় প্রিয়াংকা চাকমা কে হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি।
প্রিয়াংকা দিদিকে বার বার বোঝাতে থাকেন। তিনি বলেন আমরা আমাদের জন্য রেগুলার যে খাবার রান্না করি সেগুলোই একটু বেশি করে রান্না করে অনলাইনে সার্ভিস চালু করি। দেখি সাড়া পাই কি না? সেসময় এক কাজিন এবং ছোট বোন সুচিন্তা চাকমা রান্নার দায়িত্ব নিলেন।
এভাবে ২০১৬ তে দুই হাজার পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করলো ‘হেবাং’। যার ট্যাগলাইন ‘পাহাড়ের ঐতিহ্য এবং খাবারের বন্ধনে হেবাং’।খুব অল্প সময়ে ব্যাপক, সাড়া মিলতে থাকে।
ক্রেতাদের পাহাড়ি খাবারে এত আগ্রহ দেখে তিন বোন সিদ্ধান্ত নিলেন একটি রেস্টুরেন্টে নেবেন।অনেকদিন এদিক ওদিক খোঁজার পর ৮০০ স্কয়ার ফিটের একটি রেস্টুরেন্টের সন্ধান পেলেন।এভাবে ২০০০ পুঁজির উদ্যোগ রুপ নিল ৮০০ স্কয়ার ফিটের উদ্যোগে।
সিগনেচার ডিস হিসেবে হেবাং এ থাকছে বেম্বু চিকেন, চিকেন হরবু, বাঁশকোড়াল, হাঁসের কালাভুনা, হলুদ ফুল দিয়ে মাছ ভর্তা,আদা ফুল দিয়ে মাছ ভর্তা, চুড়ি শুটকি, শাপলা মাছ ভুনা, কাকড়া ফ্রাই সহো ৩২ রকমের খাবার।পাহাড়ি খাবার হলেও হেবাং-এর টার্গেট কাস্টোমার ঢাকার ফুড লাভাররা।
কমপ্লেইনলেস এবং পাহাড়ি ফুডের এক বিশ্বস্ত নাম হেবাং।অনলাইন সার্ভিস এবং রেস্টুরেন্টে দুইভাগে ক্রেতাদের তুলে দিচ্ছেন পাহাড়ি সব ঐতিহ্যবাহী খাবার।
হেবাং-এর প্রধান উদ্যোক্তা প্রিয়াংকা চাকমা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন ‘আমাদের ঐতিহ্যকে সকলের সামনে তুলে ধরা আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম যখন শুরু করেছিলাম অনলাইনে সেখানে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। আমি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলে সকলের যে উৎসাহ পেয়েছি সেটাই হেবাং-কে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
হেবাং-এর সহ উদ্যোক্তা বিপ্লী চাকমা বলেন, ”আমরা মনে করি মূলধন কোন বড় বিষয় নয়’ ডেডিকেটেড, গুড কমিউনিকেশন কঠোর পরিশ্রম এবং যে জিনিস নিয়ে কাজ করবো তা সম্পর্কে বিশদে জানা।এগুলোই একটি উদ্যোগ কে সামনে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখে।”
আরেক সহ উদ্যোক্তা সুচিন্তা চাকমা বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করেছি এই বিষয়ে আর এখন এগুলো নিয়েই কাজ করতে পারছি এতে করে কাজের ক্ষেত্রে নতুনকিছু আনতে পারছি মাঝে মাঝে নিজেও শিখতে পারছি।’
বর্তমানে শ্যামলী চাকমা,অভিমন্যু চাকমার মতো আরো বেশ কয়েকজন সহোযোদ্ধা হেবাং এ কাজ করে তাদের পড়াশোনা চালাচ্ছেন এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আরও বৃহৎ পরিসরে হেবাং-কে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তিন বোন অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট