“আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একজন বাবা চাইলেই হয়তো মসজিদে, মন্দিরে বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু একজন মা’র জন্য সে ব্যবস্থা আমাদের সমাজ করতে পারেনি। যে মা’কে তার সন্তানরা দেখে না শেষ বয়সে সেই মা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? এমন এক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম বহু বছর আগে। তখন অর্থ ছিলনা, সুযোগ ছিল না। আজ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি, নিজেও একজন মা হয়েছি। তাই আজ আমার প্রবীণ নিবাসে মায়েদের একটা নিরাপদ আশ্রয় দেবার ছোট্ট আয়োজন আমি রেখেছি।”
-তাসলিমা ফেরদৌস
বেলাশেষের সমস্ত অর্থের যোগান নিজেকেই দিতে হয় উদ্যোক্তার তাই গত ৬ বছর ধরে চালাচ্ছেন দু’টি রেস্টুরেন্ট। নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্রে “আড্ডায় কফি” এবং “ভোজন” এ সকাল সন্ধ্যা মানুষের ভীড়। সেখানে কাস্টমারদের সন্তুষ্টিও বেশ চোখে পড়ার মত। রেস্টুরেন্ট দু’টিতে কাজ করছেন প্রায় ৩০ জনের মতো কর্মী। তাদের বেশীর ভাগই পড়াশোনার পাশাপাশি করছেন কাজ। আছেন স্বামী পরিত্যাক্ত সুবিধাবঞ্চিত নারীরাও। লভ্যাংশ থেকে তাদের প্রত্যেকের প্রাত্যহিক খাবার, পড়াশোনার খরচ ও সংসার চালানোর যোগ্য সম্মানী দিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা সেই সাথে পূরণ করা হচ্ছে প্রবীণদের সকল মৌলিক চাহিদা।
রেস্টুরেন্ট দু’টি সামলে নিজে যখনই সময় পান, প্রবীণ কল্যান কেন্দ্রে মায়েদের সেবা করেন। এমনও মা আছেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে, বিছানাই যাদের সব, চলতে পারেন না, উঠে একটু বসতে পারেন না, নিজ হাতে খেতে পারেন না, সেই প্যারালাইজড মায়েদের রাত জেগে সেবা করে চলেছেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। দিনে রেস্টুরেন্ট চালান, সেখানে যা আয় হয় তা দিয়ে যে ক’জন মায়ের ভরণপোষণ করতে করেন। ১৪বছর ধরে এমনটাই করে চলেছেন।
তাসলিমা ফেরদৌস বলেন, “এখানকার বেশির ভাগ ‘ই শেষ বয়সে কেউ দেখেনা বলেই এই আশ্রয়ে আসেন, সন্তান-সন্ততি মরে গেলে খোঁজটাও নেয়না, লাশটাও নিয়ে যায় না। দাফন করার কাজটিও পরিবার করতে চায় না। তাদের শেষকর্মটি যেন সঠিকভাবে হয় এজন্য বেলাশেষের মায়েদের জন্য নিজেই সরকারী গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করে রেখেছি।”
ছোট জেলা শহরের নাইটিংগেল তাসলিমা ফেরদৌসের ইচ্ছা মানবকল্যাণে কাজ করার মত এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ সৈনিক গড়ে তোলার। যারা হাসিমুখ ছড়িয়ে দেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, গড়বে সমতার বাংলাদেশ।
সাদিয়া সূচনা