ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লগ্ন’র যাত্রা শুরু হয় মাত্র ২ বছর আগে, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। লগ্ন’র প্রতিষ্ঠাতা অনিক আলম ও সাবরিনা রহমান দু’জনই ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
এমন একটি অবস্থান থেকে পেশা পরিবর্তন করে সম্পূর্ন ভিন্ন একটি জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করাটা তাদের দুজনের জন্যই অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস এবং শখকে পূঁজি করে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই তাদের এনে দিয়েছে সফলতা।
প্রথম কাজ ছিলো ২৭ হাজার টাকার একটি অর্ডার, যা ছিলো একটি হলুদ ও বিয়ের ডেকোরেশানের কাজ। মূলত এরপর থেকেই তাদের কাজ সম্পর্কে মানুষ জানতে শুরু করে এবং তখন থেকে আজ পর্যন্ত আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। বিয়ে, জন্মদিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্পোরেট ফাংশান, এছাড়াও আয়োজন করেছেন ইন্ডোর এবং আউটডোর নানান মেলা, র্যাম্প শো ইত্যাদির।
তাদের প্রতিটি কাজে গতানুগতিক ধারার বাইরে সৃষ্টিশীলতার প্রতিফলন থাকে। ২৭ হাজার টাকার অর্ডার পেয়ে শুরু করে মাত্র ২ বছরে ৬ লক্ষ টাকার কাজের অর্ডারও পেয়েছেন তারা।
লগ্ন’র সত্ত্বাধিকারী সাবরিনা রহমান জানান, “আমি মনে করি আমরা এখনো শুরুর দিকেই আছি, যারা এখনো আমাদের বলে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিজনেস কেনো করছি, তাদের আমরা দেখিয়ে দিতে চাই। আমরা আমাদের মনের কথাই শুনেছি, যা আমাদের সাহায্য করেছে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে।
সাবরিনা রহমান আরও জানান, সবরকম ডেকোরেশন থেকে শুরু করে হল বুকিং, ক্যাটেরিং, মেহেদী, ফটোগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফি তথা একটি ইভেন্ট আয়োজনের সবকিছুই তাদের কাছে রয়েছে। যেকোনো থিম অনুযায়ী কাজ এবং বর্তমানের চাহিদা মোতাবেক ডিজিটাল ডেকোরেশনও করছে তারা।
বর্তমানে তাদের সাথে ২২ জনের একটি টিম কাজ করছে। সাবরিনা রহমান ২০১৬ সালে কিছুদিনের জন্য একটি কোম্পানীতে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন, কিন্তু লগ্নর প্রতি টান এবং নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে আবারও সম্পূর্ণভাবে লগ্ন নিয়েই কাজ শুরু করেন।
তিনি জানান, লগ্ন আমার কাছে আমার সন্তানের মতো। লগ্ন আমাকে আমার নাম, আমার সাফল্য দিয়েছে এবং লগ্নর মাধ্যমে আমি আমার জীবনসঙ্গীকেও পেয়েছি। উল্লেখ্য যে, অনিক আলম ও সাবরিনা রহমান দুজনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এ বছরই।
লগ্নর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি তাদের ফটোগ্রাফি “ষ্টুডিও লগ্ন” ও অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং পরিচিত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এর চিফ ফটোগ্রাফার হিসেবে আছেন অনিক আলম। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর ফটোগ্রাফির প্রতি নেশা থাকায় সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট ‘পাঠশালা’ থেকে করেছেন ফটোগ্রাফির উপর নানান কোর্স। তিনি জানান, তার ফটোগ্রাফির মূল বিষয় হলো ‘মোমেন্টস’, তিনি মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলোকে ক্যামেরাবন্দি করতে বেশি ভালোবাসেন।
বর্তমানে ‘স্টুডিও লগ্ন’ তে কাজ করছেন আরও ১৫ জনের একটি টিম। ৬,৫০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০০ টাকার প্যাকেজও রয়েছে প্রতি ইভেন্টের জন্য।
বর্তমানে অনিক আলম একটি প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি লগ্ন’র সকল কাজ এবং স্টুডিও লগ্ন’র চিফ ফটোগ্রাফারের দায়িত্বও যত্নের সাথে পালন করছেন।
তিনি জানান ‘লগ্ন এবং স্টুডিও লগ্ন’ আমাদের স্বপ্ন। এতো অল্প সময়ে আমরা মানুষের মন জোগাতে পেরেছি এবং সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। পাশাপাশি আরও অনেকের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পেরেছি।
শখের বসে শুরু করলেও আজ এটিই আমাদের সাফল্য, আমাদের স্বপ্ন। আমরা চাই দেশ এবং দেশের বাইরের সব জায়গায় কাজ করে নিজেদের আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে। একটি উদ্যোগই পারে একজন মানুষকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে, এটিই আমরা প্রমান করতে চাই।
জেবুননেসা প্রীতি
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা