অপার সম্ভাবনার উৎস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। উদ্যোক্তা আমাদের সমাজে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, অমিত তেজ ও সাহস, কর্মস্পৃহা ও কর্মক্ষমতা দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পৃথিবীর কাল পরিক্রমায় উদ্যোক্তারা এনেছে পরিবর্তনের নতুন ধারা। সময়ের স্রোতধারায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সেতুবন্ধন রচনা করেছে উদ্যোক্তারা। তাই বিশিষ্টজনেরা উদ্যোক্তাদের মাঝেই খুঁজে পেয়েছেন অমিত সম্ভাবনার পথ। রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে কাজে লাগানোর তাগিদ করেছে বোদ্ধামহল।
এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রয়াস।
বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে যদি আরো বেগবান করতে চাই তাহলে প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো গতি নেই। আপনি যদি প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই উদ্যোক্তার ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। আমাদের প্রচুর উদ্যোক্তা আছে, কিন্তু কার্যকরী উদ্যোক্তা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের সপ্তম, পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা আছে যে জিডিপির ৩৪% অর্জন করতে হবে। বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমান হলো জিডিপির ২২% মাত্র। আমরা যদি দেশকে উন্নত দেশের কাতারে উন্নতি করতে চাই সেক্ষেত্রে আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট বৃদ্ধি করতে হবে টোটাল জিডিপির ৩৪%। এক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতে বা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নাই।
আর এই জিডিপির ৩৪% লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসধারন উদ্যোগ, উদ্যোক্তা সৃষ্টি দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প।
দেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিনিয়োগে আগ্রহী সম্ভাবনাময় বেকার এবং শিক্ষিত যুব পুরুষ ও মহিলাদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত ধারণা প্রদান। উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বহুজাতিক/আন্তজার্তিক ভারী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের প্রাথমিক ও মধ্যম পর্যায়ের ইনপুট/কাঁচামাল/যন্ত্রাংশ/কম্পোনেন্ট সরবরাহের জন্য স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্যই নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাদের দক্ষতা উন্নয়ন।
আমাদের তরুণ প্রজন্মের রয়েছে উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা, উৎকর্ষতা, প্রশিক্ষণ এবং ঝুঁকি নেয়ার মতো অদম্য সাহস। প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা, আর্থিক সক্ষমতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনা। ফলে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অনুকূল পরিবেশ তৈরির বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রথম বোর্ড সভায় ট্রেনিং এবং মেন্টরিং এর মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে সাপ্লায়ার্স এন্ড লিঙ্কেজ ডেভেলপমেন্ট এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বোর্ড সভায় উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক “উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ যে, প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোগ- “বিনিয়োগ বিকাশ” এবং এ সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহারে বর্ণিত – “তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশ সমৃদ্ধি”- এর চেতনার প্রতিফলন।
ENTREPRENEURSHIP & SKILL DEVELOPMENT PROJECT (ESDP) বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য কিভাবে কাজ করছে এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে- উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর- প্রকল্প পরিচালক, জনাব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান এই প্রসঙ্গে বলেন- “এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলায় প্রকল্প মেয়াদে ২৪০০০ বেকার তরুণ -তরুণী যারা আছে ,তাদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এই প্রশিক্ষণটি হচ্ছে একটি নির্ধারিত নির্দিষ্ট মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যারা প্রশিক্ষণার্থী আছেন তারা তাদের বিজনেস স্টার্ট করার পর্যায়ে কিভাবে ব্যবসা শুরু করতে হয়, এবং স্টার্ট করার পরে তারা বিজনেস টা কিভাবে রান করবে সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ১ মাসের এই প্রশিক্ষণ কার্যকালে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে তাদের সাপ্লাই এন্ড লিংকেজের ডেভেলপমেন্ট কি, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ব্যবসা সহজীকরণের বিষয়গুলো, এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করতে হয়, বিজনেস রেগুলারিটি ডকুমেন্টস গুলো কিভাবে তৈরী করতে হয়, এই সকল সামগ্রিক বিষয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, এই প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণটিতে যারা অংশগ্রহণ করতে চান তারা সরাসরি আমাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন নিবন্ধন করার একটি সুযোগ রয়েছে, যার ফলে এখন থেকে আগ্রহী উদ্যোক্তা বা প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে”।
এছাড়া তাদের ৬৪টি জেলায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং ৬৪টি জেলায় প্রশিক্ষক সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছেন। তাদেরকে ১ মাসের টি, ও, টি (T.O.T) প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা বেসিক্যালি ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
উদ্যোক্তা খোঁজার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রত্যেক জেলায় একটি কমিটি করা হয়েছে, এই কমিটির জেলা প্রশাসককে প্রধান করে চেম্বার্স অব কমার্স এর প্রতিনিধি, সফল উদ্যোক্তারা যারা আছেন সেখান থেকে তাদের একজন প্রতিনিধি, উইমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর থেকে একজন প্রতিনিধি, ব্যাংকের একজন সিনিয়র অফিসার, তাদের উচ্চ মাধ্যমিক স্নাতক পর্যায়ের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো আছে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, এদের সমন্বয় ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা আছে। এই কমিটিই উদ্যোক্তাদের বাছাই করবে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্য বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে দেশে প্রবৃদ্ধির হার ৮% এর উপরে। প্রবৃদ্ধির এই হার সহজেই দুই অংকে উন্নীত করার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।
সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিনিয়োগ বিকাশ করে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাই সরকারের মূল ভিশন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা