ডিজাইনে ব্যস্ত উদ্যোক্তা

২০১১ সাল, ব্যাংকে জমা ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকা।  সঞ্চিত সেই আমানত ভেঙ্গে যাত্রা শুরু করলেন শাহিদা পারভীন। ভাবলেন, ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্ট নিয়ে  সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বকে উপহার দিবেন নতুন এক ব্যবসায়িক ভুবন।

১৯৯৯ সালে মাস্টার্সে পড়াকালীন সময়ে বাসাবোতে হস্ত শিল্প ঘর’এ ৩০ জন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন শাহিদা পারভীন। পাশাপাশি একটি  নারী সমিতি গঠন করে বেশ কিছু নারীকে নিয়ে ‘আট’ আনা দিয়ে নেটের ব্যাগ তৈরি থেকে শুরু করে সালোয়ার কামিজ তৈরি, সবই চলতে থাকলো।

উদ্যোক্তার বিভিন্ন ধরণের পণ্য

২০০৪ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। কাজের দায়িত্ব দিলেন অন্যকে। কিন্তু তা ভালোভাবে চলছিলো না। কোনোভাবেই স্বস্তি মিললো না অন্যের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে। কিছু দিন চাকুরী করলেন। চাকুরীরত থাকাকালীন  সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর পরিবারের পরামর্শ আর শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে ছেড়ে দিলেন চাকুরী। পুরনো কর্মীরা ফিরে আসতে শুরু করলো তার কাছে, তাদের সাথে কথাবার্তা হলো, তারপর পার্লার দিলেন।

মাস্টার্স পাশ করে পার্লার চালাচ্ছেন,  সামাজিক বাধা  পারভীনকে ব্যথিত করলো। নিজে পণ করলেন, “এমন কিছু করে দেখাবো যাতে সমাজ আমাকে একদিন সম্মান দেখাতে বাধ্য হয়। নিজের দেশের এমন কোনো পণ্য নিয়ে আমি কাজ করবো, যেখানে দেশকে সবাই দেখবে সুউচ্চ নজরে এবং বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি হবে উজ্জ্বল।  ডাইভারসিফাইড জুট প্রোডাক্টই হবে আমার কাজের মূল ক্ষেত্র”।

উদ্যোক্তার পণ্য এবং কর্মী

২০০৯ সাল, নিজের একটি ডিপিএস ভেঙ্গে পাটজাত পণ্য তৈরির সংকল্প এবং প্রোডাক্টের কাজ শুরু করলেন শাহিদা পারভীন। মাত্র ২ জন কর্মী নিয়ে বাসা সাজানো বা অফিস  সাজানো, ডেকোর, শো-পিস, কর্পোরেট গিফট আইটেম, ৮টি আইটেমের কাজ শুরু করলেন, সাড়াও মিললো ব্যাপক। লুবনান, ইনফিনিটি, কম দাম এবং ভীষণ রুচিশীল পণ্য, হাউজ, অফিস ডেকোর, শো পিস, প্রথম বছরেই ব্যবসায় বাজিমাত।

২০১১ সালে ৫ লক্ষ টাকার একটি অর্ডার পেলেন, এই অর্ডার উদ্যোক্তাকে জানান দিলো স্বপ্নের পথে হেটে যাবার কথা এবং সফলতার  সিঁড়ি ছোঁয়ার কথা। ২০১২-২০১৩ সালে বড়বড় কিছু অর্ডার উদ্যোক্তাকে পৌঁছে দেয় অফিসিয়াল লেজারে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার সেলস রেকর্ড বুকে। সে বছরেই মিললো বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি গ্রামীণফোন প্রোগ্রেসিভ অ্যাওয়ার্ড ২০১৪। সেরা নারী অ্যাওয়ার্ড উদ্যোক্তাকে এনে দিলো দারুণ অনুপ্রেরণা।

উদ্যোক্তার অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্যবসা বাড়তে থাকলো। ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী ফুলটাইম কাজ করতে শুরু করলেন উদ্যোক্তার সাথে। বাসার একটি রুমেই কাজ করে উদ্যোক্তার যাত্রার শুরু।  তারপর ৫০০ স্কয়ার ফিট জায়গা নিয়ে বিসমিল্লাহ ট্রিম সলিউশনস নামের প্রথম অফিস। তারপর সেটিকে ১২০০ স্কয়ার ফিটে উত্তীর্ণ করলেন । ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় ২৫০০ স্কয়ার ফিটে।
স্বামী মোঃ মামুন খান উৎসাহ দিয়েছিলেন সেই শুরু থেকেই।

উদ্যোক্তা এবং উদ্যোক্তার কর্মী বাহিনী

২০১৬ সালের ডিসেম্বর দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারে অংশগ্রহণ উদ্যোক্তার পথ চলাকে করে আরো বিস্তৃত, সমৃদ্ধ।। ২০১৭ সালে হংকং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার, কোলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার সহ সবগুলোতে অংশ নিলেন উদ্যোক্তা। সাত-আট ক্যাটাগরির পণ্য শো পিস ডেকোর, হোম ডেকোর, অফিস স্টেশনারি, ব্যাগ, পোশাক, লাইফ স্টাইল, প্রোডাক্ট, সব মিলিয়ে প্রায় সাত ক্যাটাগরির পণ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here