স্বামী আর ৩ ছেলে নিয়ে হাসিনা বেগমের সংসার। ঘর ভাড়া, সংসার খরচ সবকিছু মিলিয়ে তার স্বামীকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। হাসিনা বেগম স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। বেল্ট এর আইলেট তৈরি করা শুরু করলেন এক সংগ্রামী নারী। তেমন কোনো পুঁজি ছিলোনা। মাত্র ২ জন কর্মী নিয়ে সাহসে বুক বাঁধলেন হাসিনা বেগম, ভাবলেন কিছু একটা করতেই হবে। হাসিনা বেগম তখন নিজেই কঠোর পরিশ্রম করে এগিয়ে নিতে থাকলেন বেল্ট এর আইলেট তৈরির ছোট একটা ফ্যাক্টরি। ৭ বছর একটানা কঠোর পরিশ্রম করলেন একজন উদ্যোক্তা হয়ে। পরিবারের বাতিঘর হয়ে উঠলেন হাসিনা বেগম।
একসময় বড় ছেলে এসএসসি পাশ করলো। সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো টগবগে এক যুবক, মমতাময়ী মায়ের কাজ এবং স্পৃহা দেখে তারও শিখতে ইচ্ছে হলো ব্যবসায়িক ভুবন। ঢাকার একটি মার্কেটে ‘পুলিশ গুডস’ বা পুলিশ বাহিনীর পোষাক এর একটি আউটলেট এ চাকুরী করলেন সেলিম আহমেদ। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নিজের শিক্ষণও অর্জন হলো। চাচা হাজী আব্দুর রব পরামর্শ দিলেন, সব বাহিনীতে পোষাকের সাথে পড়ার ডিফেন্স বেল্টের প্রচুর চাহিদা। ডিফেন্স এর বেল্ট তৈরি হতে পারে পরিবারের ধারাবাহিক ব্যবসার একটি সঠিক উদ্যোগ।
মমতাময়ী মা সোনার গহনা বিক্রি করে পেলেন ৩০ হাজার টাকা। সেই সাথে যোগ হলো আগের ব্যবসার পুঁজি। মায়ের তত্ত্বাবধানে সার্থক ছেলে সেলিম আহমেদ বেল্ট তৈরির কাজ শুরু করলেন, শুরু হলো উৎপাদন। সাথে নতুন দুটি মেশিন, দুজন কর্মী।
বছর ৩ এর মধ্যেই বাংলাদেশ আন্সার এর একটি বড় কাজ পেলেন তারা। উদ্যোক্তা মা তরুণ উদ্যোক্তা ছেলে সেলিমকে পরামর্শ দেন কারখানা বড় করার। উদ্যোক্তা সেলিম আহমেদ দুটি অটোম্যাটিক মেশিন কিনেন। প্রায় পৌনে ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে বসানো হলো নতুন ২টি মেশিন। সেই সাথে ১২ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হলো। গাজীপুর পুলিশের সাথে বাংলাদেশ আন্সার এর বড় কাজটি করার পর অর্ডার বাড়তে থাকে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেল্টের বড় বড় অর্ডার আসতে শুরু করে । উদ্যোক্তা অত্যন্ত মান সম্মতভাবে সঠিক সময়ে বেল্টের উৎপাদন সম্পন্ন করে তা সরবরাহ করেন। ৪টি বছর বাংলাদেশ পুলিশ এর জন্য বেল্ট তৈরির কাজ করলেন সেলিম আহমেদ, সাথে মমতাময়ী মায়ের অনুপ্রেরণা।
২০১০ সাল। সুমারের ট্রেডিং একটি কাজ এর অর্ডার আসলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বেল্ট তৈরির কাজ। ১ লক্ষ ১৫ হাজার বেল্ট তৈরির কাজ। ঘুরে দাঁড়ালো পুরো পরিবার।
এভাবেই এগিয়ে যাওয়া, এভাবেই নিজেদের কারখানায় মান সম্মত পণ্য তৈরি করে কারখানার সম্প্রসারণ করা। কারখানার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। বাংলাদেশের সকল বড় বড় প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি তাদের পোশাকের বেল্ট অর্ডার দিচ্ছে আজ, অর্ডার দিচ্ছেন নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উদ্যোক্তাকে বলে দিচ্ছেন পণ্য উৎপাদন, সমৃদ্ধি এবং ফলাফলের কথা। ক্লায়েন্ট লিস্টে নানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজের ৫০টির মতো অর্ডার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ৫০টি ডিজাইনের বেল্ট যেকোনো সময়, যেকোনো সংখ্যায় তৈরি করতে এবং সরবরাহে সক্ষম উদ্যোক্তা সেলিম আহমেদ। ১৩ জন নিয়মিত কর্মী, চুক্তিভিত্তিক ৪০ জনের মতো কর্মী নিয়ে আজ উদ্যোক্তা সাফলতার সাথে তার ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
জেবুননেসা প্রীতি
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা