উদ্যোক্তা অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মোনালি বসু

কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন পরিবার নিয়ে দিল্লিতেই থাকেন অনির্বাণ চৌধুরী। সিআর পার্কে বাঙালির অভাব নেই। বাঙালিয়ানারও নেই অভাব। মাছ, মিষ্টি সবই পাওয়া যায়। কিন্তু কোথাও একটা নেই নেই ব্যাপার আছেই। গিন্নি বলেন, দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? সেবার কলকাতা থেকে যাওয়ার সময় হাঁড়ি করে রসগোল্লা নিয়ে যাচ্ছিলেন। বেরসিক কাস্টমস আটকে দিল। নেওয়াই হল না। আফসোস হচ্ছিল। পরের বার কৌটোর রসগোল্লা নিয়ে গেলেন। গিন্নি তো খেয়ে নাক সিঁটকোন। হাঁড়ির রসগোল্লার সেই স্বাদ কই? অগত্যা হাল ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে বললেন, কলকাতা গিয়ে না হয় মন ভরে মিষ্টি খেও।

অনির্বাণ ও তার স্ত্রীর মতো দেশজুড়ে আরো কত বাঙালি আছেন যারা বাংলার মিষ্টির স্বাদ ভুলতে পারেননি। প্রাণটা মিষ্টি মিষ্টি করলেও হাতের কাছে পাওয়ার উপায় কই। দীর্ঘদিন দেশের এবং কলকাতার বাইরে থেকে সেই অভাবটাই বুঝেছিলেন বাঙালি যুবক উদ্যোক্তা অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তিনিও যে বড় মিষ্টি রসিক। কাজের সূত্রে কখনও ভিন রাজ্যে তো, কখনও ভিন দেশে থাকতে হয়েছে। সেখানেই বাংলার সেই স্বাদের মিষ্টির অভাবটা বুঝতে পেরেছিলেন। তখন থেকেই ভাবতে শুরু করেন কীভাবে দূরে থেকেও টাটকা মিষ্টির অভাব মেটানো যায়।

একই সঙ্গে চাকরি, দীর্ঘদিনের বন্ধু মোনালি বসুর সঙ্গে নিজের আইডিয়া নিয়ে কথা বলেন। বন্ধুর আইডিয়াটা মন্দ লাগেনি মোনালির। কী সেই আইডিয়া? অনলাইন মিষ্টির দোকান। মানেটা সোজা। অনলাইনে পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো জায়গার যে কোনো মিষ্টির অর্ডার দিলেই বাক্স অথবা হাঁড়ি বন্দি হয়ে পৌঁছে যাবে ঘরের দরজায়। ধরুন শক্তিগড়ের ল্যাংচা অথবা বর্ধমানের মিহিদানা, কৃষ্ণনগরের সরভাজা কিংবা গঙ্গুরামস, মৌচাক অথবা নলীনচন্দ্র দাসের মতো নামী দোকানগুলোর মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করলে শুধু অনলাইনে অর্ডার দিলেই চলবে। ভিনরাজ্যে থেকেও বাংলার মিষ্টির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন না। নিজেদের এই আইডিয়া নিয়ে উদ্যোক্তা অভিরূপ এবং মোনালি ভাবনা চিন্তা শুরু করলেন কীভাবে এগোনো যায়।

সেটা ছিল ২০১৪ সাল। এক বছর ধরে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলল। তারপর ২০১৫ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করল তাদের মিষ্টি অনলাইন শপ ‘www.sweethandi.com’। অভিরূপ-মোনালির দাবি, এই ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। একেবারে নিজেদের পুঁজির ওপর ভরসা করে সুইট হান্ডির হাত ধরে পথ চলা শুরু করলেন দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু। অভিরূপ মিষ্টি ভালোবাসেন আর মোনালি দারুণ উদ্যোক্তা। দু’জনের ক্যামেস্ট্রিটা জমেছেও বেশ ভালো। তারই ফলশ্রুতি সুইট হান্ডি।

‘প্রচার যতটা হয়েছে মুখে মুখে। বন্ধুরা কেউ ব্লগ লিখে দিয়েছে। অথবা ফেসবুকে। সেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার হয়নি একেবারে। সেটা করা গেলে হয়ত আরো ভালো হত। কিন্তু এখনই যা সাড়া পাচ্ছি তাতে বুঝতে পারছি আগামী কয়েক মাসে সুইট হান্ডি একনামে সবার মুখে মুখে ঘুরবে’ -বলছিলেন অভিরূপ। রসগোল্লা, নলেন গুড়ের সন্দেশ, জলভরা তালশাঁস সন্দেশ, চকলেট সন্দেশ, কাঁচাআম সন্দেশ, গুড়ের কাঁচাগোল্লা, নলেন গুড়ের শাঁক সন্দেশ; যা চাইবেন অর্ডার দিয়ে দিন সুইট হান্ডির ওয়েবসাইটে। প্রবাসী বাঙালি যারা বাংলার মিষ্টির স্বাদ ভুলতে বসেছেন তাদের ক্ষুধা মিটিয়ে দেবেই সুইট হান্ডি।

উদ্যোক্তা অভিরূপ বলেন, ‘মিষ্টি খেতে ভালবাসি। বাইরে থেকে বাংলার মিষ্টি, সন্দেশের অভাবটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমার মতো আরো অনেক বাঙালির ক্ষুধা নিজের কানে শুনেছিলাম। তথন থেকে ভাবতে শুরু করি এই বাজারটা ধরা গেলে কেমন হয়। সেই ভাবনা ২০১৫ সালে এসে বাস্তবে রূপ নিল’।

এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে যেতে মিষ্টির টাটকা স্বাদ থাকে তো? এমন প্রশ্নে উদ্যোক্তা অভিরূপ জানান, ‘কুরিয়ার সংস্থা ফেডেক্সের সঙ্গে আমাদের টাইআপ আছে। মিষ্টির প্যাকেজিং এবং ডেলিভারি দুটোই আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতদূরে থেকে যারা বাংলার মিষ্টি খাবেন বলে সুইটহান্ডির ওপর ভরসা করেছেন তাদের সেন্টিমেন্টের কদর করি। তাই মিষ্টির স্বাদ এবং মানের সঙ্গে কোনো রকম আপোষ করি না। ক্রেতারাও আমাদের কাজে খুশি। একই ক্রেতার কাছ থেকে বার বার অর্ডার পাচ্ছি। কাজটা যে ভালোই করছি সেটাই তার প্রমাণ’।

শুধু দেশের মধ্যে নয়, দেশের বাইরেও দেশি স্বাদের মিষ্টি পৌঁছে দেওযার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে সুইট হান্ডির। কিছু আইনী জটিলতা মিটলে সেটাও সম্ভব হবে বলে জানান উদ্যোক্তা অভিরূপ। বাংলার বাইরে চেন্নাইয়ের মাইসোর পার্কের মিষ্টি, মহারাষ্ট্রের মোদক এইসব বিশেষ ধরনের মিষ্টিও যাতে অর্ডার অনুযায়ী ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় তারও চিন্তা ভাবনা রয়েছে টিম সুইট হান্ডি’র।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here