তন্ময় রায় ঠাকুরগাঁও এর ছেলে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ করেন। একটু বড় হলে তিনি কাঠালবাগান গ্রীন ক্রিকেট ক্লাব, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর ক্রিকেট ক্লাব, যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র, উদয়চল ক্রিকেট ক্লাব, ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্লাবে তিনি খেলেছেন এবং এখনও খেলছেন। এছাড়াও ক্রিকেটের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন লন্ডন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ অনেক দেশে।
সে সময় তিনি লক্ষ্য করে দেখেন উন্নত দেশগুলোতে ফার্মিং এর প্রতি সকলের একটা ঝোঁক এবং উন্নত দেশগুলোতে ফার্মিং এর মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার মনে আসে তাহলে আমরা কেন নয় আমাদের দেশেতো অফুরন্ত সম্ভাবনা চাইলে আমরাও ফার্মিংয়ের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারি।
টুর্নামেন্ট শেষে ফিরে আসার সময় মনে মনে ভাবেন ক্রিকেটের পাশাপাশি তিনি একজন উদ্যোক্তা হবেন। যদিও ক্রিকেটের শুরুর দিকে তার উদ্যোক্তা হবার এমন স্বপ্ন ছিল না কিন্তু সবকিছু দেখে তার ইচ্ছাটা যেন বাঁধ মানছে না আর। তিনি তার কাছের বড় ভাইয়ের পরামর্শে শুরু করলেন উদ্যোক্তা হবার যাত্রা।
ইচ্ছেটা শুরু হয় ২০১৬ সালের দিক। প্রথমে ইচ্ছে হয় উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার কিন্তু তারপর তিনি লক্ষ্য করেন বাংলাদেশে মোজারেলা চিজ একদম নেই কিন্তু অন্য দেশগুলোতে এটির ভীষণ চাহিদা। তিনি এটা নিয়ে কাজ করবেন এবং যা ভাবনা সেই কাজ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন ‘রাইন্ড চিজ ফ্যাক্টরি’। স্বল্প পরিসরে শুরু করলেন মোজারেলা তৈরির কাজ। বিভিন্ন জায়গা থেকে দুধ সংগ্রহ করে তৈরী করেন মোজারেলা চিজ।
মোজারেলা চিজ মূলত দুধ দিয়েই তৈরি হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর আসল রূপ বেরিয়ে আসে। চিজ এর পাশাপাশি তিনি তৈরি করেন ঘি এবং দইও। ভবিষ্যতে ওয়াই প্রোটিন এবং রোল চিজ তৈরীর উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।
উদ্যোক্তা তন্ময় রায় বলেন, “আমি ফ্যাক্টরি দেয়ার আগে একটা বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যে বাংলাদেশের প্রায় সব শহরগুলোতেই দুধের চাইতে দুগ্ধ জাত পণ্যের চাহিদা অনেক বেশী কিন্তু তার যথেষ্ট যোগান নেই। তাই কয়েকজন বড় ভাই বললো যে আমাদের ঠাকুরগাঁও অনেক ফ্যাক্টরি আছে যারা চিজ উৎপাদন করে কিন্তু এ ধরনের চিজ নেই। আমি চাইলে শুরু করতে পারি। কারখানা দিয়ে ফেললাম আর আমি যেহেতু ক্রিকেট খেলায় ছিলাম আবার খুব সহজ ছিল এটা ধরে রাখা। কারণ আমি বিভিন্ন দেশ ঘুরে এসব তৈরী করা দেখেছি”।
উদ্যোক্তা তন্ময় রায় বিশ্বমানের কারখানা তৈরি করে উৎপাদন করেছেন তার পণ্য। প্রথমদিকে কিছু সমস্যা হলেও এখন সব ঠিক আছে। প্রায় ৮জন কর্মী নিয়ে প্রতি দিন বেশ ভালো পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করছেন ঢাকা শহরের বিভিন্ন নামীদামী দোকানে। তার পণ্যের খুব ভালো চাহিদার কথাও জানান তিনি। ঢাকার শ্যামলী তার গুদামঘর যেখান থেকে তিনি ঢাকার সব জায়গায় পণ্য সাপ্লাই দিচ্ছেন। তার ইচ্ছে তিনি মোজারেলা চিজে নিজের দেশের পাশাপাশি অনেক কর্মীদেরও স্বাবলম্বী করবেন। এই স্বপ্ন পূরণে সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ চান তরুণ উদ্যোক্তা তন্ময় রায়।
বিপ্লব আহসান