নারীর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন ও নারীদের এগিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে গতকাল আয়োজিত হয় আনস্টপেবল উইমেন অনুষ্ঠান। জাতীয় উদ্যোক্তা ও তাদের অবদানকে উৎসাহ দিতে আট নারীকে সম্মাননা জানিয়েছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। গত রোববার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এ সম্মাননা জানানো হয়।
কুড়িগ্রামের ফরিদা ইয়াসমিন, যশোরের আবিদা সুলতানা, সিলেটের স্বর্ণলতা, নাটোরের ডা. ফারজানা রহমান, নওগাঁর তাসলিমা ফেরদৌস, নারায়ণগঞ্জের মরিয়ম আক্তার, সাভারের রাজিয়া সুলতানা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত। প্রায় একশজন মনোনীত উদ্যোক্তার মাঝে থেকে সেরা আটজনকে বেছে নেয়া হয়। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন। তাদের অনেকেরই এ মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছে নিপীড়িত নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার ভাবনা থেকে। আজ তারা নিজের ছাড়াও সমাজের অন্যান্য মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেলিমা আহমাদ, সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট এবং সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি ও প্রয়াস-এর পৃষ্ঠপোষক দিলশাদ নাহার আজিজ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বন্ধু, স্বামী ও সহকর্মী হিসেবে পুরুষদের সহযোগিতার হাত হাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। নারীদের স্বপ্নকে বাস্তব করার জন্য এবং ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও রাজনীতিক হিসেবে বিকশিত হওয়ার জন্য তাদের অনুপ্রেরণা জানান। এছাড়া বিশেষ অতিথি দিলশাদ আজিজ নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত সম্মানিত হয়েছেন অনুষ্ঠানে। আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি হস্তশিল্পের ওপরে একটি বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। ২০১২ সালে কুড়িগ্রামে ‘নারী’ নামে এক ব্যবসা উদ্যোগ চালু করেন ফরিদা ইয়াসমিন। পাটজাত পণ্য তৈরির এই ব্যবসা চালু করার সময় তিনি পরিবার থেকে কোনো সাহায্য পাননি। ব্যাংক থেকেও পাননি কোনো ঋণ। শত বাধা সত্ত্বেও তিনি শোষিত নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বামীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নারায়ণগঞ্জের মরিয়ম আক্তার এলইডি বাল্ব ও সাউন্ড সিস্টেম উৎপাদনের ব্যবসা চালু করেছেন।
আবিদা সুলতানা ২০০২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামীর মোটর যন্ত্রাংশের ব্যবসা চালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে তার বার্ষিক টার্নওভার ১০ কোটি টাকা। সিলেটের স্বর্ণলতারও অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। আজ ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন শহরের সুখ্যাত পার্লার ‘উইমেনস ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড’-এর মালিক। আরেক সাহসী নারী ডা. ফারজানা রহমান একটা হাসপাতাল চালান; অনুন্নত গ্রামাঞ্চলের অন্তসত্ত্বা নারীদের প্রসবকালীন সেবা এবং শিশু-মৃত্যুহার কমানোই তার প্রধান লক্ষ্য। নওগাঁর গ্রামাঞ্চলে স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন তাসলিমা ফেরদৌস। সাভারের রাজিয়া সুলতানার খামারে ২৫ কর্মী কাজ করে। গর্বের সঙ্গেই নিজেকে ‘কৃষক’ বলে পরিচয় দেন তিনি। এমন আটজন সেরা উদ্যোমী ও সাহসী উদ্যোক্তাদের সম্মানিত করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে।