ছোটবেলা থেকেই প্রবল ইচ্ছা ছিলো কিছু একটা করার। পড়াশুনা যখন শেষের দিকে চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বুঝলেন যে টাকা ছাড়া চাকরি হবে না। তখন সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামের মহিলাদের নিয়ে কুটির শিল্পের কাজ করবেন তবুও ঘুষ দিয়ে চাকরি করবো না। কিন্তু একদিন টাকা ছাড়া চাকরি করার সুযোগ এলো তারপর আর কুটির শিল্পের কাজটা করতে পারলেন না। পরিবারের ইচ্ছাতেই চাকরিতে যোগ দেন নাজমুন্নাহার ঊষা।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখের কথা। করোনা কালীন সময়ে সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তার ছোট বোন তাকে উই নামক একটা গ্রুপে ইনভাইট করেন। গ্রুপে জয়েন হওয়ার পর দেখলেন অনেক নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প। তিনিও অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা জীবন।
মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তার উদ্যোগ শুরু। উই যেহেতু দেশিয় পণ্য নিয়ে কাজ করার গ্রুপ তাই তিনি কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি, বাটিক ও জামালপুরের বিখ্যাত হাতের কাজের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে খাদি, বাটিক, হাতের কাজের পোশাক, কুর্তি, ফতুয়া, হাফশার্ট, পাঞ্জাবী, শাড়ি নিয়ে তার কাজ।
৫ জন কর্মী নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন সামনে আরো বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা আছে। তার অনলাইন পেইজের নাম ‘স্বপ্ন বুনি’। তার পণ্য দুএকবার দেশের বাইরে গিয়েছে। দেশের ভিতর, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ গিয়েছে। মাসে ৪০-৫০টা পণ্য উৎপাদন করেন। প্রতিমাসে বিক্রিহয় গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার পণ্য।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা ঊষা বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি ক্রিয়েটিভ কাজ করতে পছন্দ করতাম। চাকুরীতে টাকা দিয়ে ঢুকতে হবে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম উদ্যেক্তা হবো। তখন অবশ্য উদ্যোক্তা কথাটার সাথে পরিচিত ছিলাম কিন্তু হতে পারিনি। সেই স্বপ্ন কে মনে লালন করতাম। তারপর এতদিন পর উই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবার আমার স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপদিতে চাকুরীর পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা জাগে। খাদি, বাটিক ও জামালপুরের হস্তশিল্প আমাদের দেশিয় ঐতিহ্য বহন করে। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশিয় পণ্য কে সবার সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব বোধ থেকে আমি এইসব দেশিয় পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। ভবিষ্যতে আমার পরিকল্পনা হলো আমি যেন নিজেকে ব্র্যান্ড হিসাবে সবার সামনে পরিচিত করতে পারি।’
ঊষার গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার মুনশীরচর গ্রামে। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা গ্রামের বাড়িতেই। পড়াশুনার হাতেখড়ি গ্রামের স্কুলেই। এসএসসি পাশ করার পর শেরপুর শহরের সরকারী মহিলা কলেজ ও পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পড়াশুনা চলাকালীন সময়েই ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজে সহকারী লাইব্রেরীয়ান হিসাবে যোগদান করেন। বর্তমানে সেখানে চাকরিরত আছেন।
সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা