তাসনিম আরা বিনতি নিজেকে জনপ্রিয় মেহেদী আর্টিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন

0

বিয়ে, জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকী মেহেদীর গাড়ো লাল রং এই বিশেষ দিনগুলোকে যেন আরো বিশেষ করে তোলে। দেশে-বিদেশে সব স্থানেই এর সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে । বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই মেহেদী পরানোকে পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন। এমনই একজন রাজশাহীর তাসনিম আরা বিনতি।

শুরু করেছিলেন অফলাইনে। সাড়া পাওয়ায় অনলাইনেও ‘মেহেন্দী বাই তাসনিম’ নামে পেজ চালু করেন এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে প্রতিমাসে চোদ্দ থেকে পনেরটি কাজ থাকে তার। বিয়ের মৌসুমে যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়াও কখনো কখনো একদিনেই ৬-৭ টি কাজও পড়ে যায় বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, ‘মেহেদীর নকশায় কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে নকশা পরিবর্তন হতে থাকে। এখানে আর্টিস্ট তার নিজের রুচি, পছন্দ, এবং কল্পনা থেকে কাজ করতে পারেন।’ বাংলাদেশের অন্যতম মেহেদী আর্টিস্ট টিম নেহাজ মেহেন্দী ডিজাইন-এর একজন হয়েও কাজ করেছেন তাসনিম বিনতি।

এই শিল্পের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা হয়? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি হাতের সাইজ, কোন নকশা করা হচ্ছে সেটা কতটুকু জটিল বা সহজ তার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। বিয়েতে মেহেদী পরালে সেটা অনেক গর্জিয়াস হতে হয়, সেটাতে কাজ অনেক বেশি থাকে তাই ব্রাইডাল প্যাকেজের মূল্যও বেশি থাকে। এছাড়াও দেশের কোন জায়গা হতে আমাকে ডাকা হচ্ছে, তারা আমার বাসায় আসবে নাকি আমাকে যেতে হবে। এগুলোও মূল্য নির্ধারণের আগে ভাবতে হয়। দূর থেকে অর্ডার করায় অনেকবার ক্লায়েন্টরা নিজেই এয়ার টিকিকের ব্যবস্থাও করেছেন।’

শুরুর দিকে এই উদ্যোক্তা বহুমেলার আয়োজন করেছেন। যেন মানুষ মেহেদী আর্টিস্ট কি? বা তার কাজ কি সেই বিষয়ে জানতে পারে এবং তাকে একজন আর্টিস্ট হিসেবে চিনতে পারে। কখনো নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে আবার কখনো ক্লায়েন্টের পছন্দে মেহেদী পরিয়ে দেন তাসনিম বিনতি। এছাড়াও তার নিজস্ব ৭/৮টি ডিজাইন রয়েছে যেগুলো বহুবার ক্লায়েন্টের অনুরোধে দিয়ে দিতে হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১০/১২টি ক্রেস্ট অর্জন করেছেন এই উদ্যোক্তা।

উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথপোকথন কালে তিনি বলেন, ‘আমাকে সবাই চিনত রাজ্জাক সাহেবের নাতনি বা বাচ্চু সাহেবের মেয়ে হিসেবে। আমার নামটা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলো, ইচ্ছে হতো আমার নিজের নামেও লোকে আমাকে চিনবে। তাই নিজের নামে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে মেহেদী আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। এখন যখন সবাই বলে মেহেদী আর্টিস্ট তাসনিম বিনতি যাচ্ছে, তখন ভীষন ভাল লাগে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সমাজে মেয়েরা নিজের ইচ্ছা বা শখকে কাজে লাগানোর অনুমতি পাই না সাধারণত। শুরুর দিকে আমি বাসায় ভয়ে বলতে পারিনি যে আমি মেহেদী আর্টিস্ট হবো বা আমার যে কাজ সেটার বিবরন দিতে ভয় হতো। আমার মধ্যে যেহেতু মেহেদীর বেসিক সেন্স আমি আবিষ্কার করতে পেরেছিলাম সেজন্য এটাকেই কাজে লাগিয়েছি। এবং এখন আমার কাজ দেখে আমার পরিবার আমাকে সাপোর্ট করে। সবচেয়ে বড় সাপোর্ট পেয়েছি আমার বরের, সে না থাকলে আমি এটা ভাবতে পারতাম না, শুরুও করতেও পারতাম না। ছোটবোন রাইতাও আমায় ভীষণ সহযোগিতা করেছে।’

অনেকে কটু কথা বলেছেন পেছনে আবার অনেক ক্লাইন্ট তাসনিম বিনতিকে উৎসাহিত করেছে সামনে এগোতে। সব মিলিয়েই এখন রাজশাহী, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের জনপ্রিয় মেহেদী আর্টিস্টদের মধ্যে একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাজশাহীর মেয়ে তাসনিম বিনতি।

তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here