২৫টি শাড়ি আমাকে উদ্যোক্তা হবার পথে এগিয়ে দিল

0
উদ্যোক্তা নাসরিন হক

ছোটবেলা থেকেই সবার থেকে আলাদা জামা-কাপড় পরতে পছন্দ করতেন নাসরিন হক। নিজে ডিজাইন করে নিজ হাতে সেলাই করে সবার থেকে ভিন্ন থাকার চেষ্টা করতেন। শাড়ি, জামা এগুলো ছিলো তার খুব পছন্দের। আর পছন্দের জিনিস নিয়েই কাজ করছেন উদ্যোক্তা নাসরিন। ভালোবাসা আর শখ থেকে প্রতিদিন কোন না কোন কিছু নতুনভাবে সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তার তৈরি প্রত্যেকটা পণ্যেই রয়েছে বৈচিত্র্য আর আভিজাত্যের প্রতিফলন।

যশোরের মেয়ে নাসরিন হক যশোরেই বড় হয়েছেন। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় অনার্স ও মাস্টার্স করেন। পড়শোনা শেষ করে একটা কম্পিউটার সেন্টারে কাজ করেছেন কিছুদিন। বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন, মা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট।

নাসরিন হক জানান: পড়াশোনা চলাকালীন সময় থেকেই আমি ছোটখাট উদ্যোক্তা ছিলাম। তখন থেকেই শাড়িতে ব্লক এবং বাটিকের কাজ করে বিক্রি করতাম। এটা শিখেছিলাম বড় খালার কাছ থেকে। উনি জাপানে সবকিছু শিখে এসে ঢাকা শহরে ক্লাস নিতেন। আমি শীতের ছুটিতে তার বাসায় এসে বিভিন্ন কাজ শিখতাম, পরে যশোরে গিয়ে সেগুলো বিক্রি করতাম।

তিনি বলেন, “বিয়ের পর ১৯৯৭ সালের পর ওইভাবে আমার আর কিছু করা হয়নি। ২০০০ সালে মা হওয়ার পর আমি শুধু ছেলেকে কীভাবে মানুষ করবো, কীভাবে তাকে বড় করবো– এসব নিয়েই ডুবে থাকতাম। ভেবেছিলাম এটাই আমার জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। ছেলে যখন এসএসসি পাস করলো, তখন যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমার ছোট ভাবী আমাকে ২৫টা শাড়ি তৈরি করে দিতে বললেন। তিনি বললেন, আপনি করে দেন, আমি জানি আপনি পারবেন। আমি পেরেছি। তখন থেকেই আমার মনে হয়েছে, কেনো নতুন করে আবার শুরু করি না!”

এরপর ২০২০ সালের ১৭ জুলাই নাসরিন হক অনলাইনে একটা পেইজ করেন। ‘মানহা’ তার প্রতিষ্ঠানের নাম। এভাবেই শুরু তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। ‘মানহা’য় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি, পোশাক, সালোয়ার কামিজ, বিছানার চাদর, কুশন কাভার, টেবিল কাভার, চেয়ার কভার, গহনাসহ নানা পণ্য।

উদ্যোক্তা নাসরিন হক বলেন: আমার প্রতিষ্ঠানের সব পণ্য আমি ঢাকাতেই করি। সবই আমার নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি। আমার তৈরি পণ্য কখনোই অন্য কোথাও পাবেন না। এটাই আমার পেইজের বৈশিষ্ট্য।

শুরুর পুঁজি প্রসঙ্গে ‘মানহা’র স্বত্ত্বাধিকারী নাসরিন হক বলেন, পেইজ খোলার আগে আমি ছোট ছোট কাজ করে এক লাখ টাকার মতো সঞ্চয় করেছিলাম। তাই বলতে গেলে ‘মানহা’র শুরুটা হয়েছিল এক লাখ টাকা মূলধন নিয়ে।

বতর্মানে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে ১৫ থেকে ২০ রকম প্রোডাক্ট তৈরি করেন। মাসে বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। নাসরিন হকের নিজের কোন ফ্যাক্টরি বা কর্মী নেই। তবে ব্লকের একটা কারখানা আছে যেখানে সাত থেকে আট জন কাজ করেন।

দেশের ভেতরে বিভিন্ন শহরে তার পণ্য যাচ্ছে। তবে ঢাকাতেই বেশি বিক্রি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন ও ইংল্যান্ডে তিনি বিভিন্ন পণ্য পাঠান।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা নাসরিন হক বলেন, স্বপ্ন দেখেন নিজের একটা প্রডাকশন হাউস থাকবে, তার পণ্য অন্যান্য দেশে যাবে, সারা বিশ্বে পরিচিত হবে ‘মানহা’।

তরুণদের উদ্দেশে এই উদ্যোক্তা বলেন: তোমরা সততার সাথে পরিশ্রম করো, সততা আর পরিশ্রম থাকলে একদিন সফল উদ্যোক্তা হবেই।

আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here