২২ কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

0

চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চাসহ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বিভিন্ন ধরণের ফল। এছাড়া গত এক দশকে কুমড়া, ফুলকপি ও সমজাতীয় সবজির মতো কিছু পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দেশভিত্তিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে চিত্রটি দেখা যায়। ২০১১ সালে প্রকাশিত একই প্রতিবেদনে শীর্ষ দশেও ছিল বাংলাদেশের ১৭টি পণ্য। বিষয়টিকে সুখবর বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তবে এ ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষকদের ভর্তুকি এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ তাদের।

আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৯৪তম দেশ হলেও এফএওর হিসাবে দেখা যায়, প্রাথমিক কৃষিপণ্য (শুধু ফসল) উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪তম। শীর্ষে রয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, আয়তনে ছোট হলেও কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো।

এফএওর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য ছিল ৩ হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার লাখ কোটি টাকার সমান। উৎপাদনের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টন।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্যানুযায়ী খাদ্যশস্য, ধান, গম, সবজি, মাছ, আলু, আম, পাট, গরু-ছাগল উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। নতুন ও প্রতিকূল পরিবেশ-সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনেও বিশ্বের শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। 

এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিমসন বলেন, ‘পুষ্টি, নিরাপত্তা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি মাথায় রেখেই এ প্রতিবেদন তৈরি করে এফএও। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের প্রধান ফসল চিহ্নিত করাও এর লক্ষ্য। বাংলাদেশ এ খাতে অনেক ভালো করেছে। তবে আরো বেশি উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে।’

অবস্থান নির্ধারণী এ প্রতিবেদনকে সুখবর হিসেবে দেখছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তবে একে টেকসই করতে উৎপাদন আরো বাড়ানো এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির দিকে আরো বেশি নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘জনবহুল এ দেশে যত বেশি ফসল উৎপাদন হয়, তত আমাদের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন আরো বাড়াতে হবে। এজন্য কৃষদের আরো বেশি সহায়তা দিতে হবে। তারা যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সেটার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।’

বাংলাদেশ কোনো পণ্য উৎপাদনে প্রথম নয়। তবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট, সুপারি ও শুকনা মরিচ উৎপাদনে। চাল, রসুন এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত চিনিজাতীয় ফসলে (যেমন জোয়ার) বাংলাদেশ তৃতীয়। জাম, বরই, করমচা, লটকন ইত্যাদি বেরিজাতীয় ফল এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত সুগন্ধি মসলায় চতুর্থ। মসুর ডাল ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল (কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি) উৎপাদনে বাংলাদেশ ষষ্ঠ। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, বেগুন, শিমের বিচি ও নারকেলের ছোবড়া উৎপাদনে। চা ও কুমড়ায় বাংলাদেশ অষ্টম। আম, পেয়ারা ও গাবজাতীয় ফল, ফুলকপি ও ব্রকলি এবং মটরশুঁটি ও পাখির খাদ্য (বীজ) শ্রেণিতে বাংলাদেশের অবস্থান নবম।

প্রধান কিছু ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো। যেমন আলু। দুই দশক আগে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ ছিল ২০তম দেশ। এরপর কানাডা, তুরস্ক, পোল্যান্ডের মতো ১৩টি দেশকে একে একে পেছনে ফেলে ৭ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এফএওর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ৯৮ লাখ টন।

মরিচ (শুকনা) উৎপাদনে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এক দশকে চীন ও থাইল্যান্ডকে পেছনে ফেলে মরিচ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও ভূমির ধরনের কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। সরকারও কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। নতুন জাত উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকগুলো ফসল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়ার মতো ফলাফল আমরা পাচ্ছি।’

অবশ্য সংরক্ষণের অভাবে আলু, সবজি ও ফলমূল নষ্ট হয়ে যায় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’

এফএও মোট ১৬২টি প্রাথমিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের হিসাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ৬৮ ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদনের তালিকায় রয়েছে। এ তালিকায় যেমন একক পণ্য আছে, তেমনি সমজাতীয় ও মৌসুমভিত্তিক কয়েকটি পণ্য মিলিয়ে একটি শ্রেণি হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এফএওর হিসাবে, ২০০১ সালে ১১টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ দশে ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭টিতে। এরপর বিভিন্ন বছরে যোগ হয় আরও পাঁচটি কৃষিপণ্য—পেঁয়াজ, কুমড়া, ফুলকপি ও ব্রকলি (ফুলকপির মতো সবজি), পাখির খাদ্য (বীজ) এবং অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত শিমের বিচি। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে ২২টি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।

সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here