উদ্যোক্তা জিনাত পারভীন জেবা

নাটোরের সিংড়ার কন্যা জিনাত পারভীন জেবা। মৃত খোরসেদ আলী মোল্লা এবং সাহিদা বেগমের ৬ মেয়ে এবং দুই ছেলের মধ্যে ৭ম তিনি। শৈশব পার করেছেন গ্রামের বাড়ি শালিখায়।

মাধ্যমিক দিয়েছেন নববিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ মাধ্যমিক রানীভবানি মহিলা কলেজ থেকে। ২০০৫ সালে বিয়ে হয়ে গেল জিনাত পারভিন জেবার। থেমে গেল পড়াশোনা। শশুর বাড়ি গিয়ে প্রথম দিকে ভালই চলছিল। একপর্যায়ে স্বামীর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যা শুরু হয় তখন থেকে। স্বামী, ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল। সে সময় তিনি চিন্তা করলেন নিজে কিছু একটা কাজ শুরু করবেন যাতে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু কি নিয়ে কাজ শুরু করবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়লেন। তারপর ভাবলেন আমার আশপাশে তো অনেক মেয়ে বুটিকের কাজ করে তাহলে আমি কেন পারবো না, চেষ্টা করলে আমিও নিশ্চই পারবো। এই ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সালে নিজের জমানো ১৫শ’ টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন জিনাত পারভীন জেবার ‘মৌমি বুটিক’।

নিজের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১১ সালে যুব উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকা ঋণের জন্য আবেদন করে পেলেন ৩৫ হাজার টাকা। মন একটু খারাপ হলো, কিন্তু কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিলেন। নিয়োগ দিলেন ৪ জন কর্মী। ঋণগুলো কোন সমস্যা ছাড়াই সময়ের মধ্যে শোধ করে দিলেন। এর পর আবারো যুব উন্নয়ন থেকে ৫০ হাজার এবং ১ লাখ টাকা ঋণ নিলেন। সঠিক সময়ে দিতে সক্ষম হলেন। এগুলো দেখে মৌমি বুটিকের ওপর পুরো আস্থা অর্জন করলেন যুব উন্নয়নের কর্মকর্তাগণ। তিনি যাতে তার মৌমি বুটিককে আরো বহুদূর নিয়ে যেতে পারে সেজন্য জেবাকে পরামর্শ দিলেন কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বেশি ঋণের জন্য আবেদন করতে। যেন বড় পরিসরে কাজ করতে পারেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী জেবা গেলেন কর্মসংস্থান ব্যাংকে। কথা বললেন এবং সেখান থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ পেলেন বিনা জামানতে।

শুরু করলেন বড় পরিসরে কাজ। বর্তমানে তিনি খুচরা এবং পাইকারি দুইভাবেই তার পণ্য দিয়ে থাকেন। অনেক মা-বোন ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে পাইকারিতে পণ্য নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। ৪ জন কর্মী থেকে বর্তমানে তার ২শ’ জন কর্মী এবং ১ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে আজ তার পণ্য এবং সম্পদ মিলে ১৫ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। ১২ বছর পর মনের তীব্র ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া পড়াশোনা আবার শুরু করেছেন জিনাত পারভীন জেবা।

বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় তার পণ্যগুলো পৌঁছে যাচ্ছে এবং সৌদি আরবে দুইবার মৌমি বুটিকের পণ্য গেছে। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি পরামর্শ দেন, ‘কাজ শুরু করলে বাধা আসবেই, কাছের মানুষদের কটু কথা শুনতে হবে। এগুলো ভেবে পিছিয়ে পড়া যাবে না। সকল বাধাকে জয় করতে পারলেই উদ্যোক্তা জীবনের সফলতা সম্ভব’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here