এক সময় বাবার সাথে হাটে হাটে হকারি করতেন তাসলিমা খাতুন। বিক্রি করতেন নিজেদের তৈরি তালপাতা, পাট, প্লাস্টিক ও কাসার তৈরি পণ্য।
পাবনার চাটমোহর এলাকার অনেকেরই জীবিকা ছিল কাসা এবং পাটের তৈরি পণ্য হাটে হাটে বিক্রি। তাসলিমার বয়স সবে ১২ কিংবা ১৩ বছর। তার মা-চাচীরা বাড়িতে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতেন, সেগুলো নানা যখন হাটে বিক্রি করতেন তখন সঙ্গে থাকতেন তাসলিমা।
বাবা-মা’র সাথে কাজ করতে গিয়ে তাসলিমা খাতুন নিজেও তালপাতা,পাট, কাসা এবং প্লাস্টিক দিয়ে ডালা, ম্যাট, বালতি, তুরি, রানার সেট, বাটি, নৌকা, খাদিসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ শিখে নেন।
অনেক বছর পর হাটে নিজেদের তৈরি পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে হঠাৎ একদিন ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটস এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে তাসলিমা খাতুনের পরিচয় হয়। তিনি খুব পছন্দ করলেন তাদের পণ্যগুলো। ১৯৯৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটসে প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তাসলিমা খাতুন এখন শতাধিক কর্মীবাহিনী নিয়ে তালপাতার পণ্যগুলো তৈরি করছেন। সহযোগী হিসেবে তার ছেলে মোঃ তুহিন রয়েছেন তার সাথে। ছোটবেলা থেকেই মা’কে হস্তশিল্পের কাজ করতে দেখেছেন তুহিন। তাই এই কাজের প্রতি ভালবাসা সেই ছোটবেলা থেকেই।
সময়ের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব পণ্য অনেকটাই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তাই তাদের তৈরি হস্তশিল্পের প্রসার এবং প্রচারে মার্কেটিংকে বেছে নেন তুহিন। সামাজিক পাতায় গ্রুপগুলোতে নিজেদের পরিচিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।
বছরের প্রায় সাত থেকে আট মাস তারা ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটসের কাজ করে থাকেন। পঁচিশ থেকে ৩০ হাজার প্রোডাক্ট তারা সরবরাহ করেন বছরে, এতে ছয় থেকে ১০ লাখ টাকার প্রোডাক্ট ডেলিভারি হয়।
‘দাঁথিয়া মাঝগ্রাম হস্তশিল্প সমিতি’র মাধ্যমে সংসারের সকল কাজ সামলে হস্তশিল্পের এই কাজ করে কর্মীরা জনপ্রতি মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তারা একদিকে যেমন পরিবারে স্বচ্ছলতা আনছেন, অন্যদিকে তেমনি দেশের হস্তশিল্প খাতে অনন্য ভূমিকা পালন করছেন।
তাসলিমা খাতুন বলেন: আমাদের পণ্য সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। পাবনার চাটমোহরে অনেক পরিবার হস্তশিল্পের সাথে জড়িত। হস্তশিল্পের প্রতি যদি সরকারি সহযোগিতা কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে, তাহলে ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এতে আমাদের নারীকর্মীরা কাজের সুযোগ পাবেন। আমি চাই আমাদের পণ্য দেশ এবং দেশের বাইরেও সব জায়গায় পরিচিতি পাবে। আমাদের প্রোডাক্টগুলো দেশের বাইরে সরাসরি রপ্তানি করতে চাই।
পাবনার এ্ডওয়ার্ড কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র মোঃ তুহিন মা’র সাথে ওতপ্রোতভাবে হস্তশিল্পের কাজে জড়িত। তিনিও চান হস্তশিল্পের প্রচার এবং প্রসার। তুহিন নিজে যেমন কোনভাবেই হাল ছাড়তে রাজি নন, তেমনি চান তরুণ উদ্যোক্তারাও সব চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাক।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা