‘হংস মিথুন’-কে মনিপুরী শাড়ির বিশ্বস্ত উৎস করতে চান শান্তা

1
উদ্যোক্তা শান্তা ভৌমিক

শান্তা ভৌমিক একটা নাম খুঁজছিলেন তার উদ্যোগের জন্য। নামটি হতে হবে শৈল্পিক এবং অর্থবহ। তাই গল্প, উপন্যাস, পত্র-পত্রিকা; এমনকি ইন্টারনেটে দেয়া ‘চোখ ধাঁধানো নামের তালিকা’ থেকে কিছুই বাদ রাখেননি। কিন্তু, কিছুতেই চোখ আটকাচ্ছিলো না উদ্যোক্তা শান্তার। এভাবে নামের পেছনেই চলে যায় বেশ ক’টা দিন।

হঠাৎ একদিন আনমনে গুনগুন করে গাইছিলেন ‘মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম’। নজরুলগীতিটি গাইতে গাইতে হুট করেই ‘হংস মিথুন’ নামটি মনে ধরে গেলো। আর সাত-পাঁচ না ভেবে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। “আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম।” এভাবেই ‘হংস মিথুন’ নামটি জুড়ে গেলো তার স্বপ্নের সাথে।

শান্তা ভৌমিকের স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে।

পড়াশোনা শেষ করে সংসার জীবনে প্রবেশ করা। তারপরই ২০২০ সালে উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। শান্তার বরাবরই ইচ্ছে ছিলো দেশীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে তাঁত শিল্পের বিকল্প আর কী হতে পারে! ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী তাঁতশিল্পের প্রতি ভালোবাসা থেকে মনিপুরী শাড়িকেই উদ্যোগের অংশ করলেন। এমন একটি শিল্পকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই শিল্পের সাথে জড়িত তাঁতিদের পাশে দাঁড়ানোও ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য।

শান্তা ভৌমিক জানান, তার মা ছিলেন ভীষণ শাড়িপ্রেমী। মায়ের আলমারিতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা শাড়িগুলো তাকে খুব টানতো। শাড়ির প্রতি ভালোলাগা আর ভালোবাসাটুকু তাই বলা যায় মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।

মনিপুরী শাড়ি তার মূল পণ্য। তবে শাড়ির পাশাপাশি মনিপুরী ওড়না, শাল, গামছাও আছে তার ‘হংস মিথুনে’। মনিপুরী তাঁতিদের তৈরি করা সব কিছুই তিনি রাখার চেষ্টা করেন। পোশাকের পাশাপাশি কিছু গহনা নিয়েও কাজ করছেন তিনি।

শুরুর দিকে বাধা ছিলো পণ্যের সোর্সিং। সেই বাধাটা ভালো করেই উতরে গেছেন শান্তা। তাঁতিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেই সংগ্রহ করেন এবং কিছু ক্ষে্ত্রে তাঁতিদের দিয়ে নিজের ডিজাইনে শাড়ি তৈরি করিয়ে নেন।

দ্বিতীয় বাধা ছিলো ডেলিভারির বিষয়টি। সেটিও কাটিয়েও ওঠেন উদ্যোক্তা। এখন তার নিজস্ব ডেলিভারিম্যানও আছে।

তবে সবচেয়ে বড় বাধা যেটার মুখোমুখি হচ্ছেন এখন সেটা হচ্ছে মূলধন। এটা ঢের বুঝতে পারছেন যে আরও কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে পারলে আরও ভালো করে এগিয়ে যেতো ‘হংস মিথুন’। কিন্তু, সেটা পারছেন না। তার মতো ছোট উদ্যোক্তার জন্য ব্যাংকিং প্রক্রিয়াও বেশ জটিল বলে জানালেন তিনি।

তবে, সারাদেশে বিভিন্ন জেলা শহরে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যায় তার পণ্য। দেশের বাইরেও যায় নিয়মিত। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে তার মনিপুরী শাড়ি।

উদ্যোগের শুরু থেকেই তার পরিবারের সকলের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। কেউ তাকে নিরুৎসাহিত করেননি কখনও। স্বামীও তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।

ভবিষ্যতে ‘হংস মিথুন’ একটা বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হিসেবে সকলের মনে জায়গা করে নেবে বলে স্বপ্ন দেখেন শান্তা ভৌমিক। সকলের কাছে ‘হংস মিথুন’ যেন মনিপুরী শাড়ির বিশ্বস্ত উৎস হয়, এমনটাই চাওয়া তার।

উদ্যোক্তা জানান, প্রতিদিনই তার পেইজে অনেকে মেসেজে জানতে চান শো-রুম কোথায়? তাই তার স্বপ্ন হলো একটি শো-রুম। এখন তার সকল চেষ্টা রাজধানীর বুকে শুধুমাত্র মনিপুরী শাড়ি নিয়ে একটা বড় শো-রুম করার, যেখানে শাড়িপ্রেমীরা অনায়াসে পছন্দের মনিপুরী শাড়িটি বেছে নিতে পারবেন।

মাসুমা শারমিন সুমি
উদ্যোক্তা বার্তা
,

1 COMMENT

Leave a Reply to Sajib Cancel reply

Please enter your comment!
Please enter your name here