উদ্যোক্তা- মোঃ সহিদুল ইসলাম

নওগাঁর আত্রাই থানার পৈসাঁওদা গ্রামের মৃত নাসিরুদ্দিন এবং মৃত নুরজাহান বেগম দম্পতির পুত্র মোঃ সহিদুল ইসলাম। জন্ম নিজ গ্রামে হলেও নানাবাড়ি এলাকা নাটোরে জায়গির থাকতেন তিনি। সেখানে কড়ইতলা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দেশে এবং দেশের বাইরে বহু বছর তিনি সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১০ তিনি অবসরে চলে যান।

মোঃ সহিদুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু চিন্তা করতেন মনে মনে ছেলের ভবিষ্যৎ কিভাবে নিশ্চিত করা যায়। এই ভাবনা থেকে তাঁর মাথায় এলো তিনি ‘অয়েল মিল’ স্থাপন করবেন। তিনি যেখানে জায়গির থেকে পড়াশোনা করতেন তাদের অয়েল মিল ছিল। সহিদুল ইসলাম অবসর সময়ে সেখানে কাজ করতেন। কাজ করতে করতে অয়েল মিলের কাজে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। সে সূত্র ধরেই তিনি অয়েল মিল স্থাপন করবেন বলে ঠিক করলেন। এতে তাঁর ছেলে তো স্বাবলম্বী হবেই পাশাপাশি আরো দশ জনকে স্বাবলম্বী করতে পারবেন এমন চিন্তা ছিল তাঁর।

১৭ লক্ষ টাকা, সঙ্গে একজন কর্মি নিয়ে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করলেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃসহিদুল ইসলাম এবং ছেলে মোঃ রুমি সারওয়ার। প্রতিষ্ঠানের নাম দিলেন ‘সৈনিক অয়েল মিল’। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘সহিদ অয়েল মিল’ রাখা হয়।

উদ্যোক্তা বার্তাকে অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, আমি চাকরি জীবনেও ফাঁকি দেওয়া পছন্দ করতাম না, এখনও করি না। আমার প্রতিষ্ঠানে আমি সরিষার তেল উৎপন্ন করি। সময় এবং কিছু অর্থ বাঁচাতে হয়তো আমি বাজার থেকে যে কোন ধরনের সরিষা কিনে নিলেই পারতাম। কিন্তু আমি কখনই সেটা করি না। আমি বা আমার ছেলে যে যখন সময় পাই তখন মান্দা থানা, গাঙ্গোপাড়া সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে ঘুরে ঘুরে সরিষা সংগ্রহ করি।

মোঃ সহিদুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানে ৩৪ টি ঘানি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ২০ টি ঘানি চালু হয়ে গেছে এই তিন-চার বছরের মধ্যে। এছাড়াও ভবিষ্যতে আরো অসংখ্য ঘানি বসানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। বর্তমানে তাদের ১৫ জন কর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন মার্কেটিং সেক্টর দেখাশোনা করেন। এদের সবসময় সর্বাত্মক সাহায্য করে ছেলে রুমি সারওয়ার।

রাজশাহী, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সহিদুল অয়েল মিলের খাঁটি সরিষার তেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে সাধারণ মানুষ সবার পরিবারেরই এখন স্থান দখল করে নিচ্ছে সহিদ অয়েল মিলের খাঁটি সরিষার তেল। এছাড়াও দেশের বাইরে সৌদি আরবেও সহিদুল অয়েল মিলের সরিষার তেল গেছে। ১৭ লক্ষ টাকা পুঁজি এখন কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে।

তরুণদের উদ্দেশ্যে সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি না করে নিজে উদ্যোগ গ্রহণ কর। উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পাশাপাশি আরো দশজনকে স্বাবলম্বী করো। সৎ উপায়ে সাফল্য আসবেই’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here